| অনুসন্ধান

দ্য ভয়েস: প্রোপাগান্ডার কণ্ঠস্বর

১ ডিসেম্বর ২০২৫


দ্য ভয়েস: প্রোপাগান্ডার কণ্ঠস্বর


নিউজ সাইটের ছদ্মবেশে ‘বিডি ডাইজেস্ট’ চালুর তিন দিন পরই, ১৮ আগস্ট ২০২৪-এ ‘দ্য ভয়েস’ নামের একটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন নিবন্ধিত হয়। সাইটটির বিন্যাস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মতো, এবং ফুটারে নিজেদের পরিচয়ে তারা লিখেছে: “Its primary focus is the diplomacy, politics, and policy of the USA and Bangladesh.” কিন্তু সাইটটিতে বাংলাদেশ–সম্পর্কিত সংবাদেরই আধিক্য চোখে পড়ে। ইংরেজিভাষী প্ল্যাটফর্ম হলেও এতে বাংলা ভাষায় পড়ার অপশনও রয়েছে।


এটির ২২ হাজার ফলোয়ার সম্বলিত ফেসবুক পেইজের ট্রান্সপারেন্সি থেকে দেখা যায়, এর দুজন এডমিন রয়েছেন, একজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্যজন বাংলাদেশ থেকে। এছাড়া ১৩ হাজার সাবস্ক্রাইবারের ইউটিউব চ্যানেলেও বাংলা ভাষার ভিডিও আছে। অর্থাৎ, সাইটটি স্পষ্টতই বাংলাদেশ–কেন্দ্রিক এবং এর অডিয়েন্সও মূলত বাংলাদেশি।  



সাইটটির পরিচিতিতে লেখা আছে, এর সম্পাদক দস্তগীর জাহাঙ্গীর ও নির্বাহী সম্পাদক এ.জেড.এম সাজ্জাদ হোসেন। দস্তগীর জাহাঙ্গীর সময় টিভির সাবেক সাংবাদিক এবং হোয়াইট হাউজ প্রতিনিধি ছিলেন। নির্বাহী সম্পাদক এ.জেড.এম সাজ্জাদ হোসেন ২০২১ সাল থেকে গণ-অভ্যুত্থানের সময় পর্যন্ত ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার ছিলেন। এ দুজনই মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার রায়ের পর এই রায়ের বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন, যা শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের প্রতি তাঁদের আনুগত্যের প্রমাণ।


অভ্যুত্থান চলাকালীন, ২৫ জুলাই ২০২৪-এ তিনি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দস্তগীর জাহাঙ্গীর প্রশ্ন করতে গিয়ে  বলেছিলেন, “ছাত্র আন্দোলনের নামে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের জঙ্গি সদস্যরা ঢাকায় জড়ো হয়েছিল”। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানালেও সময় টিভির প্রতিবেদনে দেখা যায়, দস্তগীর জাহাঙ্গির সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছিলেন।


দস্তগীর জাহাঙ্গীর বর্তমানে Press Xpress নামে একটি গণমাধ্যমের হোয়াইট হাউজ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। প্রেস এক্সপ্রেস কিছুটা পুরোনো হলেও, এটিও The Voice এর মতো বাংলাদেশ সম্পর্কিত ভুয়া সংবাদ ও অপতথ্যে ভরপুর। ২০২০ সাল থেকে এটির ফেসবুক পেইজ এবং ২০২২ সাল থেকে এটির ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েবসাইট আওয়ামীলীগের ইংরেজি প্রোপাগান্ডা মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। প্রেস এক্সপ্রেসের ফেসবুক পেইজের ৭ জন এডমিন আছেন, যার ৫জনই বাংলাদেশ থেকে পেইজ পরিচালনা করেন। প্রেস এক্সপ্রেসের “যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো প্রধান” হিসেবে অভ্যুত্থানের পরেও তিনি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে আওয়ামীলীগের পক্ষ হয়ে অপতথ্য ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রশ্ন অব্যাহত রেখেছেন। যেমন, ১৭ অক্টবর ২০২৪-এ তিনি প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, আন্দোলন চলাকালীন বাংলাদেশে ৩০০০ এর বেশি পুলিশ নিহত হয়েছে, যা সম্পূর্ণই মিথ্যা। পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো তথ্য মোতাবেক, নিহত পুলিশের সংখ্যা ছিল ৪৪। বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে। এ বছর ১৯ মার্চ প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি পুরনো একটি ছবিকে “গতকাল হিজবুত তাহরিরের মিছিল” দাবি করে প্রশ্ন করেন। দেখুন বাংলাফ্যাক্টের ফ্যাক্টচেক। 






দ্য ভয়েসের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, এতে আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের নামে অন্তত ৫টি কলাম রয়েছে। সাইটটিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে “ডিপস্টেটের ষড়যন্ত্র” হিসেবে আখ্যা দিয়ে Deepanwita Roy Martin নামে একজনের মতামত পাওয়া যায়। দ্বীপান্তিতা রায় মার্টিন একজন অভিনেত্রী, যিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় আলোচিত “আলো আসবেই” গ্রুপের সদস্য ছিলেন। তাঁর ফেসবুক একাউন্টে লেখা আছে, তিনি দ্যা ভয়েসে কাজ করেন।  তিনি আওয়ামীলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ ও অন্যান্য পেইজ থেকে নিয়মিত লাইভ আলোচনায় হোস্ট হিসেবে অংশ নেন। এতে স্পষ্ট হয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ছদ্মবেশ নেয়া “দ্যা ভয়েস” মূলত আওয়ামী এক্টিভিস্ট ও সাংবাদিকদের দ্বারা পরিচালিত অপতথ্য ছড়ানোর একটি ভুয়া নিউজ সাইট। 


গত ১৩ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছবি দিয়ে আওয়ামীলীগের লকডাউন প্রচার করে একটি সংবাদ প্রকাশ করে সাইটটি। এ সময় ফেসবুক পেইজ কথিত লকডাউনের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েও পোস্ট দেয়। 

  


অর্থাৎ দ্য ভয়েস কেবল আওয়ামীলীগের হয়ে অপপ্রচার নয়, বরং দলীয় প্রচারের কাজও করে।





Topics:



বিডি ডাইজেস্ট: আওয়ামী প্রোপাগান্ডা মেশিনের আরেক হাতিয়ার
১২ নভেম্বর ২০২৫

বিডি ডাইজেস্ট: আওয়ামী প্রোপাগান্ডা মেশিনের আরেক হাতিয়ার

দৈনিক আজকের কণ্ঠ: পত্রিকার ছদ্মবেশে প্রপাগাণ্ডা মেশিন
৯ নভেম্বর ২০২৫

দৈনিক আজকের কণ্ঠ: পত্রিকার ছদ্মবেশে প্রপাগাণ্ডা মেশিন

হত্যার কারণ সাম্প্রদায়িক কলহ নয়, অন্য কিছু
১৯ মার্চ ২০২৫

হত্যার কারণ সাম্প্রদায়িক কলহ নয়, অন্য কিছু

Awami League has contributed the most to political violences in past few decades
১৮ মার্চ ২০২৫

Awami League has contributed the most to political violences in past few decades

আপনার মতামত দিন

এই পোস্টটি কি আপনার জন্য সহায়ক ছিল?

100%

0%

আপনার মতামত শেয়ার করুন:

| মন্তব্য সমূহ:

এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্যটি করুন!



দ্য ভয়েস: প্রোপাগান্ডার কণ্ঠস্বর

অনুসন্ধান

দ্য ভয়েস: প্রোপাগান্ডার কণ্ঠস্বর

১ ডিসেম্বর ২০২৫

<p>দ্য ভয়েস: প্রোপাগান্ডার কণ্ঠস্বর</p>


নিউজ সাইটের ছদ্মবেশে ‘বিডি ডাইজেস্ট’ চালুর তিন দিন পরই, ১৮ আগস্ট ২০২৪-এ ‘দ্য ভয়েস’ নামের একটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন নিবন্ধিত হয়। সাইটটির বিন্যাস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মতো, এবং ফুটারে নিজেদের পরিচয়ে তারা লিখেছে: “Its primary focus is the diplomacy, politics, and policy of the USA and Bangladesh.” কিন্তু সাইটটিতে বাংলাদেশ–সম্পর্কিত সংবাদেরই আধিক্য চোখে পড়ে। ইংরেজিভাষী প্ল্যাটফর্ম হলেও এতে বাংলা ভাষায় পড়ার অপশনও রয়েছে।


এটির ২২ হাজার ফলোয়ার সম্বলিত ফেসবুক পেইজের ট্রান্সপারেন্সি থেকে দেখা যায়, এর দুজন এডমিন রয়েছেন, একজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্যজন বাংলাদেশ থেকে। এছাড়া ১৩ হাজার সাবস্ক্রাইবারের ইউটিউব চ্যানেলেও বাংলা ভাষার ভিডিও আছে। অর্থাৎ, সাইটটি স্পষ্টতই বাংলাদেশ–কেন্দ্রিক এবং এর অডিয়েন্সও মূলত বাংলাদেশি।  



সাইটটির পরিচিতিতে লেখা আছে, এর সম্পাদক দস্তগীর জাহাঙ্গীর ও নির্বাহী সম্পাদক এ.জেড.এম সাজ্জাদ হোসেন। দস্তগীর জাহাঙ্গীর সময় টিভির সাবেক সাংবাদিক এবং হোয়াইট হাউজ প্রতিনিধি ছিলেন। নির্বাহী সম্পাদক এ.জেড.এম সাজ্জাদ হোসেন ২০২১ সাল থেকে গণ-অভ্যুত্থানের সময় পর্যন্ত ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার ছিলেন। এ দুজনই মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার রায়ের পর এই রায়ের বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন, যা শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের প্রতি তাঁদের আনুগত্যের প্রমাণ।


অভ্যুত্থান চলাকালীন, ২৫ জুলাই ২০২৪-এ তিনি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দস্তগীর জাহাঙ্গীর প্রশ্ন করতে গিয়ে  বলেছিলেন, “ছাত্র আন্দোলনের নামে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের জঙ্গি সদস্যরা ঢাকায় জড়ো হয়েছিল”। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানালেও সময় টিভির প্রতিবেদনে দেখা যায়, দস্তগীর জাহাঙ্গির সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছিলেন।


দস্তগীর জাহাঙ্গীর বর্তমানে Press Xpress নামে একটি গণমাধ্যমের হোয়াইট হাউজ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। প্রেস এক্সপ্রেস কিছুটা পুরোনো হলেও, এটিও The Voice এর মতো বাংলাদেশ সম্পর্কিত ভুয়া সংবাদ ও অপতথ্যে ভরপুর। ২০২০ সাল থেকে এটির ফেসবুক পেইজ এবং ২০২২ সাল থেকে এটির ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েবসাইট আওয়ামীলীগের ইংরেজি প্রোপাগান্ডা মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। প্রেস এক্সপ্রেসের ফেসবুক পেইজের ৭ জন এডমিন আছেন, যার ৫জনই বাংলাদেশ থেকে পেইজ পরিচালনা করেন। প্রেস এক্সপ্রেসের “যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো প্রধান” হিসেবে অভ্যুত্থানের পরেও তিনি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে আওয়ামীলীগের পক্ষ হয়ে অপতথ্য ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রশ্ন অব্যাহত রেখেছেন। যেমন, ১৭ অক্টবর ২০২৪-এ তিনি প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, আন্দোলন চলাকালীন বাংলাদেশে ৩০০০ এর বেশি পুলিশ নিহত হয়েছে, যা সম্পূর্ণই মিথ্যা। পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো তথ্য মোতাবেক, নিহত পুলিশের সংখ্যা ছিল ৪৪। বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে। এ বছর ১৯ মার্চ প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি পুরনো একটি ছবিকে “গতকাল হিজবুত তাহরিরের মিছিল” দাবি করে প্রশ্ন করেন। দেখুন বাংলাফ্যাক্টের ফ্যাক্টচেক। 






দ্য ভয়েসের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, এতে আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের নামে অন্তত ৫টি কলাম রয়েছে। সাইটটিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে “ডিপস্টেটের ষড়যন্ত্র” হিসেবে আখ্যা দিয়ে Deepanwita Roy Martin নামে একজনের মতামত পাওয়া যায়। দ্বীপান্তিতা রায় মার্টিন একজন অভিনেত্রী, যিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় আলোচিত “আলো আসবেই” গ্রুপের সদস্য ছিলেন। তাঁর ফেসবুক একাউন্টে লেখা আছে, তিনি দ্যা ভয়েসে কাজ করেন।  তিনি আওয়ামীলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ ও অন্যান্য পেইজ থেকে নিয়মিত লাইভ আলোচনায় হোস্ট হিসেবে অংশ নেন। এতে স্পষ্ট হয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ছদ্মবেশ নেয়া “দ্যা ভয়েস” মূলত আওয়ামী এক্টিভিস্ট ও সাংবাদিকদের দ্বারা পরিচালিত অপতথ্য ছড়ানোর একটি ভুয়া নিউজ সাইট। 


গত ১৩ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছবি দিয়ে আওয়ামীলীগের লকডাউন প্রচার করে একটি সংবাদ প্রকাশ করে সাইটটি। এ সময় ফেসবুক পেইজ কথিত লকডাউনের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েও পোস্ট দেয়। 

  


অর্থাৎ দ্য ভয়েস কেবল আওয়ামীলীগের হয়ে অপপ্রচার নয়, বরং দলীয় প্রচারের কাজও করে।