যাচাই পদ্ধতি
বাংল্যাফ্যাক্ট বিশ্বাস করে যে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য গণতন্ত্র, সমাজ ও নাগরিক সচেতনতার জন্য একটি বড় হুমকি। সে বিবেচনায় একটি সুসংগঠিত, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সত্যের ভিত্তিতে বিকৃত বা ভুল তথ্য চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করা হয়।
বাংল্যাফ্যাক্টের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রক্রিয়া শুধু এমন তথ্য নির্বাচন করে, যা জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে, নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে বা কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির প্রতি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, জনপিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও প্রচলিত সংবাদমাধ্যম নিয়মিত পর্যালোচনা করে এর মধ্যে থেকে ভাইরাল বা বিতর্কিত দাবি শনাক্ত করা হয়। নির্বাচন করার পর তথ্যের উৎস এবং প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখা হয়- যেমন কে প্রথম এটি ছড়িয়েছে? কোথায় এটি প্রকাশিত হয়েছে? এবং তার কী উদ্দেশ্যে পরিবেশিত হয়েছে? প্রয়োজন হলে, সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমস্ট্যাম্প, পুরনো স্ক্রিনশট, আর্টিকেল আর্কাইভ অথবা ওপেন সোর্স টুলসের সহায়তায় তথ্যের উৎস শনাক্ত করা হয়।
তথ্য যাচাইয়ের পরবর্তী ধাপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য জানতে চেষ্টা করা হয়। কোনো দাবি যদি কোনো রাজনৈতিক নেতা, প্রতিষ্ঠান বা সংবাদমাধ্যম কর্তৃক প্রচারিত হয়ে থাকে, তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়। এতে করে দাবির মূল অর্থ ও প্রাসঙ্গিকতা আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। পাশাপাশি, বাংল্যাফ্যাক্ট স্বাতন্ত্র্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে- যেমন সরকারি রেকর্ড, গবেষণা প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ, যেগুলো যাচাই করার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের স্বীকৃত পেশাজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যেমন কোনো স্বাস্থ্যবিষয়ক দাবি সত্যতা যাচাই করতে চিকিৎসাবিদ বা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করা হয় থাকে। একইভাবে, ছবি বা ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে প্রযুক্তি বিষয়ক বা OSINT (Open-Source Intelligence) দক্ষদের পরামর্শ নেওয়া হয়। এভাবে, একটি দাবির ব্যাপারে বাংল্যাফ্যাক্ট বহুমুখী উৎস থেকে তথ্য একত্রিত করে এবং প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ সম্পন্ন করে।
সব তথ্য বিশ্লেষণের পর প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এই প্রতিবেদনগুলো এমনভাবে লেখা হয় যাতে পাঠক সহজেই বুঝতে পারেন কী দাবি করা হয়েছে, সেটি কেন সন্দেহজনক, এবং অনুসন্ধানে কী উঠে এসেছে। প্রতিটি রিপোর্টে তথ্যের উৎস, যাচাইয়ের ধাপ এবং প্রাসঙ্গিক প্রমাণ উল্লেখ করা হয়, যাতে রিপোর্টের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বজায় থাকে।
বাংল্যাফ্যাক্ট মনে করে, পেশাদার ও দায়িত্বশীল তথ্য যাচাই কেবল মিথ্যা রোধে সহায়তা করে না, বরং একটি সচেতন ও তথ্যনির্ভর সমাজ গঠনের পথও প্রসারিত করে। প্রতিটি কাজই এই বিশ্বাস ও মূল্যবোধে প্রতিফলিত হয়।