| ফ্যাক্ট চেক

শহীদ আরমান মোল্লার স্ত্রী সালমা সহায়তা পাননি, এমন দাবি ভিত্তিহীন

২১ মে ২০২৫


গুজব

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজপথের শহীদ আরমান মোল্লা ওরফে নাহিদের বিধবা স্ত্রী সালমা বেগম জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। তবে সেই টাকা তুলে নিয়েছেন সালমার শশুর ইসব মোল্লা ও শাশুড়ি জোবেদা বেগম। ‘শহীদ আরমান মোল্লার আদরের ছেলেমেয়ের ঠাঁই হয়েছে এতিমখানায়’- এ শিরোনামে গতকাল একটি সংবাদ করেছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। বাসসের এ সংবাদের বরাত দিয়ে দেশের অনলাইন-প্রিন্ট সংস্করণের বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। সালমার বরাত দিয়ে সংবাদে উল্লেখ আছে- সালমা সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের আর্থিক সহায়তা পাননি। ফলে আরমান মোল্লার তিন ছেলে-মেয়ের মধ্য থেকে বড় মেয়ে মাহি ও রাফিকে একটি এতিমখানায় দিয়ে এসেছেন। অর্থাভাবে তাদের এতিমখানায় দিতে বাধ্য হয়েছেন মা সালমা বেগম। ছোট মেয়ে আফরার সঙ্গে নিজের বাসায় থাকছেন সালমা।
এদিকে বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধানে জানা যায়, শহীদ আরমান মোল্লার স্ত্রী জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন। ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সালমাকে আর্থিক সহযোগিতা করার সকল প্রমাণাদি বাংলাফ্যাক্টের কাছে সরবরাহ করেন। বাংলাফ্যাক্টের কাছে সকল প্রমাণাদি সংরক্ষিত আছে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের গ্রাহক সেবা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান শাহিদ বাংলাফ্যাক্টকে বলেন, ‘শহীদ আরমান মোল্লার স্ত্রী সালমা আক্তারকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেয়া হয়েছে। যা না ভাঙালে প্রতি মাসে তা থেকে ১০ হাজার করে টাকা পাবেন। শুধু এই ১০ লাখ নয়, এরকম মোট ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেয়া হবে। অর্থাৎ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার করে টাকা পাবেন। আর প্রতি মাসে ভাতা দেয়া হবে ২০ হাজার। মোটকথা একটি শহীদ পরিবার প্রতি মাসে মোট ৫০ হাজার টাকা সংসার পরিচালনার জন্য পাবেন।’
সাইদুর আরও বলেন, ‘শুধু এই দুই উৎসই নয়, বরং একটি শহীদ পরিবার, বিশেষত ঢাকার শহীদ পরিবার একাধিক উৎস থেকে কয়েক লাখ করে টাকা অর্থ সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু টাকার লোভ কিছু মানুষকে বিগড়ে দিয়েছে। মিডিয়া পেলেই অসহায়ত্বের কথা বলে বেড়াচ্ছে। আর মিডিয়াগুলোও যাচাই বাছাই ছাড়া ভুল তথ্য নিউজকার্ড বানিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’
সাইদুরের সঙ্গে যোগাযোগের পর বাংলাফ্যাক্টের পক্ষ থেকে সালমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার বিষয় স্বীকার করেন সালমা। তবে আর্থিক সহায়তা শ্বশুর-শশুড়ি নিয়ে নিছেন বলে দাবি করেন তিনি। সালমা বলেন, ‘জুলাই শহিদ ফাউন্ডেশন থেকে আমি যে চেক পাইছি, সেটা আমার শশুর তুলে নিছে। আমাকে দিছে মাত্র দেড় লাখ টাকা। আমার শশুর গত ২ মাস আগে মারা গেছে। জেলা প্রশাসন থেকে যে টাকা পাইছি সেটা আমার শাশুড়ি নিয়ে নিছে।’ যদিও বাসসে তিনি আর্থিক সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন। সুতরাং আর্থিক সহায়তা পাননি বিষয়টি সঠিক নয়।
শ্বাশুড়ি জোবেদা বেগমও জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়ার বিষয় স্বীকার করেন। তিনি বাংলাফ্যাক্টকে বলেন, ‘দাদী যেইহানে নাতিরাও সেহানে থাকবো, তাই আমি টাহাটা নিছি (দাদী যেখানে থাকবে সেখানে নাতিরা থাকবে,তাই টাকাটা নিছি)।’
এদিকে আরও বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে সহায়তা করার কথা জানান জেলা প্রশাসক। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম সালমা ও তার সন্তানদের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
উল্লেখ্য, আরমান মোল্লা ২০২৪ সালের ২১ জুলাই নরসিংদী শিলমান্দী ইউনিয়নের সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কলাগাছিয়া নয়াপাড়ার এলাকার বাসিন্দা।

আপনার মতামত দিন

এই পোস্টটি কি আপনার জন্য সহায়ক ছিল?

আপনার মতামত শেয়ার করুন:




ফ্যাক্ট চেক

শহীদ আরমান মোল্লার স্ত্রী সালমা সহায়তা পাননি, এমন দাবি ভিত্তিহীন

২১ মে ২০২৫

শহীদ আরমান মোল্লার স্ত্রী সালমা সহায়তা পাননি, এমন দাবি ভিত্তিহীন

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজপথের শহীদ আরমান মোল্লা ওরফে নাহিদের বিধবা স্ত্রী সালমা বেগম জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। তবে সেই টাকা তুলে নিয়েছেন সালমার শশুর ইসব মোল্লা ও শাশুড়ি জোবেদা বেগম। ‘শহীদ আরমান মোল্লার আদরের ছেলেমেয়ের ঠাঁই হয়েছে এতিমখানায়’- এ শিরোনামে গতকাল একটি সংবাদ করেছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। বাসসের এ সংবাদের বরাত দিয়ে দেশের অনলাইন-প্রিন্ট সংস্করণের বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। সালমার বরাত দিয়ে সংবাদে উল্লেখ আছে- সালমা সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের আর্থিক সহায়তা পাননি। ফলে আরমান মোল্লার তিন ছেলে-মেয়ের মধ্য থেকে বড় মেয়ে মাহি ও রাফিকে একটি এতিমখানায় দিয়ে এসেছেন। অর্থাভাবে তাদের এতিমখানায় দিতে বাধ্য হয়েছেন মা সালমা বেগম। ছোট মেয়ে আফরার সঙ্গে নিজের বাসায় থাকছেন সালমা।
এদিকে বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধানে জানা যায়, শহীদ আরমান মোল্লার স্ত্রী জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন। ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সালমাকে আর্থিক সহযোগিতা করার সকল প্রমাণাদি বাংলাফ্যাক্টের কাছে সরবরাহ করেন। বাংলাফ্যাক্টের কাছে সকল প্রমাণাদি সংরক্ষিত আছে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের গ্রাহক সেবা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান শাহিদ বাংলাফ্যাক্টকে বলেন, ‘শহীদ আরমান মোল্লার স্ত্রী সালমা আক্তারকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেয়া হয়েছে। যা না ভাঙালে প্রতি মাসে তা থেকে ১০ হাজার করে টাকা পাবেন। শুধু এই ১০ লাখ নয়, এরকম মোট ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেয়া হবে। অর্থাৎ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার করে টাকা পাবেন। আর প্রতি মাসে ভাতা দেয়া হবে ২০ হাজার। মোটকথা একটি শহীদ পরিবার প্রতি মাসে মোট ৫০ হাজার টাকা সংসার পরিচালনার জন্য পাবেন।’
সাইদুর আরও বলেন, ‘শুধু এই দুই উৎসই নয়, বরং একটি শহীদ পরিবার, বিশেষত ঢাকার শহীদ পরিবার একাধিক উৎস থেকে কয়েক লাখ করে টাকা অর্থ সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু টাকার লোভ কিছু মানুষকে বিগড়ে দিয়েছে। মিডিয়া পেলেই অসহায়ত্বের কথা বলে বেড়াচ্ছে। আর মিডিয়াগুলোও যাচাই বাছাই ছাড়া ভুল তথ্য নিউজকার্ড বানিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’
সাইদুরের সঙ্গে যোগাযোগের পর বাংলাফ্যাক্টের পক্ষ থেকে সালমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার বিষয় স্বীকার করেন সালমা। তবে আর্থিক সহায়তা শ্বশুর-শশুড়ি নিয়ে নিছেন বলে দাবি করেন তিনি। সালমা বলেন, ‘জুলাই শহিদ ফাউন্ডেশন থেকে আমি যে চেক পাইছি, সেটা আমার শশুর তুলে নিছে। আমাকে দিছে মাত্র দেড় লাখ টাকা। আমার শশুর গত ২ মাস আগে মারা গেছে। জেলা প্রশাসন থেকে যে টাকা পাইছি সেটা আমার শাশুড়ি নিয়ে নিছে।’ যদিও বাসসে তিনি আর্থিক সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন। সুতরাং আর্থিক সহায়তা পাননি বিষয়টি সঠিক নয়।
শ্বাশুড়ি জোবেদা বেগমও জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়ার বিষয় স্বীকার করেন। তিনি বাংলাফ্যাক্টকে বলেন, ‘দাদী যেইহানে নাতিরাও সেহানে থাকবো, তাই আমি টাহাটা নিছি (দাদী যেখানে থাকবে সেখানে নাতিরা থাকবে,তাই টাকাটা নিছি)।’
এদিকে আরও বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে সহায়তা করার কথা জানান জেলা প্রশাসক। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম সালমা ও তার সন্তানদের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
উল্লেখ্য, আরমান মোল্লা ২০২৪ সালের ২১ জুলাই নরসিংদী শিলমান্দী ইউনিয়নের সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কলাগাছিয়া নয়াপাড়ার এলাকার বাসিন্দা।