| ফ্যাক্ট চেক

আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বলেছেন ট্যামি ব্রুস- দাবিটি মিথ্যা

২৬ আগস্ট ২০২৫


মিথ্যা

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র এবং জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত উপ-প্রতিনিধি ট্যামি ব্রুস দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে কয়েকটি মন্তব্য করেছেন দাবি করে একটি ভিডিও সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওটি ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে ট্যামি ব্রুস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এবং আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যদি সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এতে ব্যর্থ হয়, তবে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে এবং জাতিসংঘ থেকে বাংলাদেশের সদস্যপদ বাতিল করা হবে।'

পাশাপাশি, শেয়ারকৃত ভিডিওটির ক্যাপশনের শেষে দাবি করা হয়েছে, সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত আওয়ামী সরকারের ক্ষমতায় ফেরানোর ব্যবস্থা নেবেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক।

বাংলাফ্যাক্ট যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটিতে ট্যামি ব্রুস আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন আয়োজনে সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং জাতিসংঘ থেকে বাংলাদেশের সদস্যপদ বাতিল - এসব বিষয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, গত ২০ জুন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রেস ব্রিফিংয়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের প্রশ্নের জবাবে ট্যামি ব্রুস কথা বলেন। এটি সেই প্রেস ব্রিফিংয়ের দৃশ্য।

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইউটিউব অ্যাকাউন্টে গত ২০ জুন প্রকাশিত একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এটি গত ২০ জুনে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের প্রেস ব্রিফিং। এই প্রেস ব্রিফিংয়ের ২৮ মিনিট ০৩ সেকেন্ড থেকে ২৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মিল রয়েছে।

এর আগে ভিডিওটির ২৭ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে গত ১৬ জুনে ইজারল্যান্ডের জেনেভায় ৫৯তম মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, তা উল্লেখ করে একজন ট্যামি ব্রুসকে জিজ্ঞাসা করেন এই বিষয় কি যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নীতির লঙ্ঘন হিসেবে দেখে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র কি নিন্দা করে?

এই প্রশ্নের জবাবে প্রেস ব্রিফিংয়ের ২৮ মিনিট ০৩ সেকেন্ড থেকে ২৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত ট্যামি ব্রুস কথা বলেন। ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘অন্য কোনো দেশে যা ঘটছে তা নিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আমি বলব, হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তবে যদি বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবস্থান সম্পর্কে হয়, তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে আপনাকে উত্তর দেওয়া হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি যা বলতে পারি তা হলো, ডেপুটি সেক্রেটারি ল্যান্ডাউ বুধবার বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সম্পর্ক, বিশেষ করে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বিস্তারের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে।’

এই বক্তব্যে ট্যামি ব্রুস জানান, হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবে যদি বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবস্থান সম্পর্কে হয়, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে উত্তর দেওয়া হবে। আর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ডেপুটি সেক্রেটারি ল্যান্ডাউ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসন্ন নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ, বাণিজ্য ও সম্পর্ক জোরদার নিয়ে আলোচনা করেছেন। শান্তি ও স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে জানিয়েছে।

তাছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে ‘সাংবিধানিক ভাবে নির্বাচিত আওয়ামী সরকারের ক্ষমতায় ফেরার ব্যবস্থা নেবেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক’—এমন দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র: এখানে

আপনার মতামত দিন

এই পোস্টটি কি আপনার জন্য সহায়ক ছিল?

আপনার মতামত শেয়ার করুন:




ফ্যাক্ট চেক

আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বলেছেন ট্যামি ব্রুস- দাবিটি মিথ্যা

২৬ আগস্ট ২০২৫

আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বলেছেন ট্যামি ব্রুস- দাবিটি মিথ্যা

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র এবং জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত উপ-প্রতিনিধি ট্যামি ব্রুস দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে কয়েকটি মন্তব্য করেছেন দাবি করে একটি ভিডিও সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওটি ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে ট্যামি ব্রুস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এবং আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যদি সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এতে ব্যর্থ হয়, তবে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে এবং জাতিসংঘ থেকে বাংলাদেশের সদস্যপদ বাতিল করা হবে।'

পাশাপাশি, শেয়ারকৃত ভিডিওটির ক্যাপশনের শেষে দাবি করা হয়েছে, সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত আওয়ামী সরকারের ক্ষমতায় ফেরানোর ব্যবস্থা নেবেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক।

বাংলাফ্যাক্ট যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটিতে ট্যামি ব্রুস আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন আয়োজনে সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং জাতিসংঘ থেকে বাংলাদেশের সদস্যপদ বাতিল - এসব বিষয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, গত ২০ জুন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রেস ব্রিফিংয়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের প্রশ্নের জবাবে ট্যামি ব্রুস কথা বলেন। এটি সেই প্রেস ব্রিফিংয়ের দৃশ্য।

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইউটিউব অ্যাকাউন্টে গত ২০ জুন প্রকাশিত একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এটি গত ২০ জুনে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের প্রেস ব্রিফিং। এই প্রেস ব্রিফিংয়ের ২৮ মিনিট ০৩ সেকেন্ড থেকে ২৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মিল রয়েছে।

এর আগে ভিডিওটির ২৭ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে গত ১৬ জুনে ইজারল্যান্ডের জেনেভায় ৫৯তম মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, তা উল্লেখ করে একজন ট্যামি ব্রুসকে জিজ্ঞাসা করেন এই বিষয় কি যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নীতির লঙ্ঘন হিসেবে দেখে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র কি নিন্দা করে?

এই প্রশ্নের জবাবে প্রেস ব্রিফিংয়ের ২৮ মিনিট ০৩ সেকেন্ড থেকে ২৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত ট্যামি ব্রুস কথা বলেন। ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘অন্য কোনো দেশে যা ঘটছে তা নিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আমি বলব, হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তবে যদি বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবস্থান সম্পর্কে হয়, তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে আপনাকে উত্তর দেওয়া হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি যা বলতে পারি তা হলো, ডেপুটি সেক্রেটারি ল্যান্ডাউ বুধবার বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সম্পর্ক, বিশেষ করে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বিস্তারের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে।’

এই বক্তব্যে ট্যামি ব্রুস জানান, হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবে যদি বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবস্থান সম্পর্কে হয়, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে উত্তর দেওয়া হবে। আর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ডেপুটি সেক্রেটারি ল্যান্ডাউ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসন্ন নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ, বাণিজ্য ও সম্পর্ক জোরদার নিয়ে আলোচনা করেছেন। শান্তি ও স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে জানিয়েছে।

তাছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে ‘সাংবিধানিক ভাবে নির্বাচিত আওয়ামী সরকারের ক্ষমতায় ফেরার ব্যবস্থা নেবেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক’—এমন দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র: এখানে