| বিশ্লেষণ
ইন্টারনেটে এআই কন্টেন্ট: নিশানায় সরকার,
রাজনৈতিক দল ও বাহিনী
২৭ অক্টোবর ২০২৫
প্রপাগান্ডাকারীদের কাছে এআই প্রযুক্তি এক নতুন হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন চটকদার ও রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত বিষয়ক কন্টেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষত, বিশ্বব্যাপী দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের আগে, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়, বা জরুরি পরিস্থিতিতে এই ধরনের কন্টেন্ট জনমতকে প্রভাবিত এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকে ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি ও মানহানির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এআই প্রযুক্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লৈঙ্গিক অসংবেদনশীল কন্টেন্টও ছড়ানো হচ্ছে এআই প্রযুক্তি দিয়ে।
এআই-সৃষ্ট ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তু ও রাজনৈতিক ঝোঁক নির্ণয় করা এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিসরে এআই-নির্ভর প্রপাগান্ডার ধরন ও ঝুঁকি অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট-চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট ২০২৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তিন মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এআই কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দল, সরকার এবং বাহিনী (পুলিশ ও সেনাবাহিনী) নিয়ে বেশি এআই-সৃষ্ট অপতথ্য ছড়াচ্ছে। রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে আওয়ামীলীগকে নিয়ে; তবে ছড়িয়ে পড়া এসব অপতথ্যসমূহ দলটির পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা, অন্যদিকে আওয়ামীলীগ ব্যতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সরকার নিয়ে ছড়িয় পড়া অপতথ্যসমূহের ধরন নেতিবাচক।
এই গবেষণার জন্য মোট ৭১টি ছবি/ভিডিও এবং এর কন্টেন্টকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। [নমুনা বাছাইয়ের পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে] প্রতিটি ভিডিও পৃথক বিশ্লেষণ একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ভিডিওগুলো বিষয়ভিত্তিকভাবে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে: আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সেনাবাহিনী/পুলিশ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, দুর্ঘটনা, ধর্মীয়, লৈঙ্গিক-অসংবেদনশীলতা, ডাকসু ও অন্যান্য। এই ক্যাটাগরিগুলো মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ নয়। একটি ভিডিওতে একাধিক ক্যাটাগরির উপস্থিতি ছিল। বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নমুনা ভিডিওসংখ্যা (N=71) ভিত্তি ধরে শতকরা হার নির্ণয় করা হয়েছে।
প্ল্যাটফর্ম ও মাধ্যম
শনাক্তকৃত এআই-সৃষ্ট অপতথ্যসমূহ ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার) এবং থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছিল। একাধিক কন্টেন্ট একের অধিক প্ল্যাটফর্মে পাওয়া গেছে। এটা অপতথ্যগুলোর প্রচারের বহুমাত্রিক ও সমন্বিত বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে ফেসবুকে, সেখানে মোট ৬১টি কনটেন্ট (প্রায় ৮৬%) শনাক্ত করা হয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে টিকটক, যেখানে ৪০টি কনটেন্ট (প্রায় ৫৬%) পাওয়া গেছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স এবং থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে তুলনামূলকভ কম উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সারণি ১ : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক এআই-সৃষ্ট অপতথ্যের উপস্থিতি
কন্টেন্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিথ্যা বা প্রপাগান্ডামূলক বার্তা প্রচারে ভিডিও ফরম্যাট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। মোট ৭১টি কন্টেন্টের মধ্যে ৫৭টি ছিল ভিডিও-কেন্দ্রিক এবং ১৪টি ছিল ছবি-কেন্দ্রিক।
কন্টেন্টের বিষয়বস্তু ও বিশ্লেষণ
এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত মোট ৭১টি কন্টেন্টের বিশ্লেষণে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। পরিসংখ্যানগত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩৫টি কন্টেন্ট ছিল রাজনৈতিক দল নিয়ে। অর্থাৎ, প্রায় ৪৯ শতাংশ ভিডিওতে রাজনৈতিক দল বিষয়ক কন্টেন্টের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এরপরেই রয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিয়ে। প্রায় ৩১ শতাংশ কন্টেন্ট ছিল পুলিশ ও সেনাবাহিনী সম্পর্কিত। ১৭ শতাংশ কন্টেন্টে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রসঙ্গে ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানের নেতাদের সম্পর্কিত বিষয় পাওয়া যায় প্রায় ১১ শতাংশ ভিডিওতে। বিভিন্ন দুর্ঘটনার সময় এআই সৃষ্ট কন্টেন্টের ছড়িয়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পায়। গবেষণার জন্য নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনা ছিল অন্যতম। প্রায় ১০ শতাংশ এআই সৃষ্ট কন্টেন্টে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার বিষয় লক্ষ্য করা যায়। নমুনাগুলোর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ কন্টেন্ট ছিল লৈঙ্গিক অসংবেদনশীল।
সারণি ২ : গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত কন্টেন্টের বিষয়ভিত্তিক প্রবণতা
নমুনাগুলোর ৪৯ শতাংশ ভিডিওতে রাজনৈতিক দল সম্পর্কিত কন্টেন্ট পাওয়া গেলেও, সবগুলোই ছিল চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৬৮ শতাংশ ছিল আওয়ামীলীগকে কেন্দ্র করে, ১৭ শতাংশ বিএনপি, ৯ শতাংশ জামায়াত এবং ৬ শতাংশ এনসিপিকে নিয়ে, যদিও এই কন্টেন্টসমূহের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিয়ে যা প্রচারিত হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই দলটির পক্ষের। অর্থাৎ, আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত কন্টেন্টগুলো দিয়ে দলটির ভূমিকা ও ভাবমূর্তিকে ইতিবাচক করে দেখানোর প্রবণতা ছিল।
তবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ নিয়ে কেবল নেতিবাচক প্রচারণাই ছিল। অর্থাৎ, এআই-সৃষ্ট অপতথ্যগুলো দিয়ে আওয়ামীলীগের পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা করতে দেখা যায়, বিপরীতে বাকি দলগুলো নিয়ে কেবল নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
যেমন, গত আগস্টে এক ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল যেখানে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পরিহিত কিছু শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের মধ্যে সামনের জন একটি প্লেকার্ডটি ধরে আছেন। প্লেকার্ডে লেখা - ‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’। কিন্তু এটি বাস্তব কোনো ছবি নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ছবি তৈরি করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত কন্টেন্টগুলো বিশ্লেষণ করা দেখা যায় যে, আওয়ামীলীগ ব্যতীত সবাইকে নিয়েই নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে যেসব এআই-সৃষ্ট অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, সেখানে বাহিনী বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে জড়িয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সম্পর্কিত প্রচারণা দেখা গিয়েছে। যেমন, গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের স্লোগানের ভিডিও। তবে ভিডিওটি ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
একইরকম নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা গিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এর প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের নিয়ে। আলোচিত নমুনাসমূহের মধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকার সম্পর্কিত যে ১২ টি (প্রায় ১৭ শতাংশ) কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে, তার সবগুলোই নেতিবাচক। যেমন, গত জুলাইয়ে, ‘সরকারের আসল চেহারা ফাঁস’ শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে একজন বৃদ্ধকে বলতে শোনা যায়, “ইউনূস সরকারকে সরাও, দেশ বাঁচাও। এই সরকার গরিবদের জন্য আর কোনো উন্নয়ন করছে না, কোনো সংস্কার করছে না।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
একইভাবে, গত আগস্টে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সংসদে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। সেখানে এক নারী বক্তাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায়। কিন্তু এই ভিডিওটিও ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি।
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, অর্থ উপদেষ্টা সরকারি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মে অর্থ বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন এবং প্রতি সপ্তাহে মোটা অঙ্কের আয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এই ভিডিওটিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিকৃতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল।
নমুনাসমূহের মধ্যে ৮টি কন্টেন্টে (প্রায় ১১ শতাংশ) জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত বিষয়বস্তু পাওয়া যায়। এই কন্টেন্টসমূহের প্রায় সবগুলোতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ঘিরে নেতিবাচক প্রচারণার প্রবণতা খেয়াল করা যায়। কেননা, ৮টি কন্টেন্টের সবগুলোই ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নেতিবাচক বিষয়বস্তু। যেমন, গত আগস্ট মাসে একটি ভিডিওতে ছড়িয়ে পড়ে যে, আইজিপি বাহারুল আলম ৫ আগস্টকে পুলিশ হত্যা দিবস উল্লেখ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু, এই ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একজন বয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। যেখানে সাংবাদিক তাঁর কাছে ৫ আগস্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ‘অবুঝ ছাত্ররা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে দেশ ধ্বংস করেছে’ বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু এই ভিডিওটিও ছিল এআই-সৃষ্ট।
যে কোনো জাতীয় দুর্ঘটনার সময় অপতথ্য বৃদ্ধি পায়। মাইলস্টোন ট্রাজেডির সময় অনেকগুলো এআই সৃষ্ট কন্টেন্ট ছড়িয়ে পড়েছিল নেটদুনিয়াতে। যেমন, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেই বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য দাবি করে একটি এআই-সৃষ্ট ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
প্রাপ্ত নমুনাসমূহের মধ্যে লৈঙ্গিক অসংবেদনশীল বিষয় পাওয়া যায় প্রায় ১০ শতাংশ কন্টেন্টে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো উপদেষ্টাকে জড়িয়ে এআই-সৃষ্ট অপতথ্য ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। নারী রাজনীতিবিদদের বিশেষভাবে এর লক্ষ্যবস্তু হতে দেখা যায়। যেমন, গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে হোটেল কক্ষে এক তরুণীর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আদতে এই ছবিটি ছিল এআই-সৃষ্ট।
একইভাবে গত জুলাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারার হাফপ্যান্ট পরিহিত একটি ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। কিন্তু এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ফুল প্যান্ট পরা একটি ছবি সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমার ব্যক্তিগত ছবি দাবিতে দুইটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। কিন্তু্ দেখা যায়, ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন দুই নারীর ছবি সংগ্রহ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে জুমার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ধর্মীয় ও অন্যান্য বিভিন্ন ইস্যুতে এআই-সৃষ্ট কন্টেন্ট ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তবে, এই গবেষণার জন্য নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে এটা খুব অল্প ছিল।
উপসংহার
এই গবেষণা থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, বর্তমানে রাজনৈতিক দল নিয়ে এআই-সৃষ্ট অপতথ্য বেশি ছড়াচ্ছে। ২০২৫ সালের তিনমাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, পুলিশ/সেনাবাহিনীকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া এআই-সৃষ্ট অপতথ্যগুলো সম্পূর্ণ নেতিবাচক। ইতিবাচক প্রচারণা হচ্ছে কেবল কেবল আওয়ামীলীগকে নিয়ে। এআই-সৃষ্ট প্রায় সকল অপতথ্য ও প্রচারণা আওয়ামী লীগের দিকে পক্ষপাতপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
পাশপাশি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়েও নেতিবাচক প্রচারণা খেয়াল করা যাচ্ছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত যত কন্টেন্ট পাওয়া যাচ্ছে, সবগুলোতেই অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানকারীদের অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রবণতা দেখা যায়।
গবেষণার পদ্ধতি
এই বিশ্লেষণের জন্য মোট ৭১টি এআই-সৃষ্ট কন্টেন্টকে নমুনা [স্যাম্পল] হিসেবে নেওয়া হয়েছে। নমুনাগুলো পার্পাসিভ স্যামপ্লিং পদ্ধতিতে বাছাই করা হয়েছে। অর্থাৎ, সামাজিক মাধ্যমে রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম বলে প্রতীয়মান হয়েছে এমন ভিডিও নেওয়া হয়েছে। বাছাই করার জন্য প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠানের আলোচিত তিন মাসে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকগুলো নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড সার্চ করে উল্লিখিত তিনমাসে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এআই-সৃষ্ট ভিডিও নেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স প্ল্যাটফর্ম থেকে কন্টেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রায়শই একই কন্টেন্ট একাধিক প্ল্যাটফর্মে পাওয়া গিয়েছে। একই কন্টেন্টের ফ্যাক্ট চেক একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান করেছেন। নমুনাগুলোকে যাচাইয়ের জন্য যে টুলসগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে : ডিপফেক-ও-মিটার, হাইভ মডারেশন, সাইটইঞ্জিন, ক্যান্টিলাক্স, রেসেম্বল এআই ডিটেক্ট সহ অন্যান্য।
গবেষণার সীমাবদ্ধতা
এই গবেষণার প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো এর সময়কাল-ভিত্তিক স্বল্পতা, যেখানে মাত্র তিন মাসের ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর ফলে এআই-সৃষ্ট কন্টেন্টের দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা ও বিবর্তন সম্পূর্ণভাবে বাদ পড়েছে। এছাড়াও, ডেটা সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা ছিল যে সকল এআই-সৃষ্ট ভিডিওর লিঙ্ক কাজ করছিল না বা যা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল (যেমন, প্ল্যাটফর্মের নীতি লঙ্ঘনের কারণে), সেগুলিকে গবেষণা থেকে বাদ দিতে হয়েছে। এর ফলে নমুনা সম্পূর্ণতা বজায় থাকেনি এবং বাদ পড়া কন্টেন্টগুলির প্রকৃতি হয়তো সামগ্রিক প্রবণতার চিত্রকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে।
****
এআই-সৃষ্ট যে অপতথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে
ইউনূসকে সরিয়ে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়ে ভারতের সংসদে বক্তব্য
গত আগস্টে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সংসদে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। সেখানে এক নারী বক্তাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায়। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। ভিডিওতে ‘JPT NEWS’ লেখা একটি লোগো দেখা যায়, যার সূত্র ধরে ‘JPT Bangla News’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে এআই উপাদান পাওয়া যায়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৬৮ শতাংশ।
‘ইউনূস সরকার লুটেরা’ বলে ভারতের সংসদে সমালোচনা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লুটেরা বলে ভারতের সংসদে এক বক্তা সমালোচনা করছেন দাবি করে গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়ানো হয়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে এআইজনিত বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল হাইভ মডারেশনে যাচাই করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯২ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
ড. ইউনূস ১৫ আগস্টে শোক দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করে হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৫ই আগস্টে শোক পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে দাবিটি সঠিক নয়, ভিডিওটি এক বছর পূর্বের। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এর অডিওর সাথে ড. ইউনূসের মুখভঙ্গির অমিল পাওয়া যায়। আসলে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের একটি ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ভুয়া অডিও যুক্ত করে এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ আটটি জাতীয় দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছরের ১৬ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বৃদ্ধের 'ইউনূস সরকারকে সরাও, দেশ বাঁচাও' স্লোগান
গত জুলাইয়ে, ‘সরকারের আসল চেহারা ফাঁস’ শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে একজন বৃদ্ধকে বলতে শোনা যায়, “ইউনূস সরকারকে সরাও, দেশ বাঁচাও। এই সরকার গরিবদের জন্য আর কোনো উন্নয়ন করছে না, কোনো সংস্কার করছে না।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্লেষণে ভিডিওর ভয়েস, পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এআইজনিত অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯১ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
জনতার ইউনূস বিরোধী বিশাল মিছিল
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে জনতার মিছিলের দৃশ্য। ভিডিওটিতে জনতাকে ‘হইহই রইরই, ইউনূসের বাচ্চারা হুঁশিয়ার সাবধান, রাজাকারের বাচ্চারা হুঁশিয়ার সাবধান, দালালের বাচ্চারা হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মুখভঙ্গি ও উচ্চারিত স্লোগানের মধ্যে অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল হাইভ মডারেশনের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশেরও বেশি।
ড. ইউনূস নতুন বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মে অর্থ বিনিয়োগ করতে বলেছেন
গত জুলাইয়ে “A new project for the citizens of Bangladesh” শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দাবি করা হয়, সরকার একটি বিনিয়োগ প্লাটফর্ম চালু করেছে যেখানে একজন নাগরিক প্রতি সপ্তাহে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আয় করতে পারবে। মাত্র ৩০৫০০ টাকা বিনিয়োগ করলেই সপ্তাহে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আয় করার নিশ্চয়তা রয়েছে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। তবে দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, আল জাজিরাকে দেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিওকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। মূল ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এমন বিনিয়োগ উদ্যোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কন্ঠস্বর, ঠোঁটের অস্বাভাবিক নড়াচড়া দেখা যায়, যা মূল সাক্ষাৎকারে দেখা যায়নি। ভিডিওটির ভয়েস এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৮ শতাংশ। পাশাপাশি, ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটককৃতদের এনসিপির নেতা এবং আমাদের সন্তান বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য প্রদান
গত জুনে গুলশানের একটি বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা সহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “গুলশানে যে ধরা পড়েছে, সে আমাদের এনসিপির নেতা। আমি বকে দিয়েছি, বলেছে আর করবে না। চাঁদাবাজ হোক বা যা-ই হোক, ওরা তো আমাদেরই সন্তান।” তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওতে গুগলের ‘Veo’ এআই টুলের জলছাপ এবং অসঙ্গতিপূর্ণ ইংরেজি লেখা শনাক্ত হয়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সের বিশ্লেষণে ভিডিওটি ৮২ শতাংশ এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনায় ফলাফল পাওয়া যায়।
হোটেল রুমে তরুণীর সঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এতে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে হোটেল কক্ষে এক তরুণীর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ছবি। ছবিটিতে হোটেল রুমের দৃশ্য অস্বাভাবিকভাবে নিখুঁত, মুখে প্রাকৃতিক দাগ বা সূক্ষ্ম ভাঁজ অনুপস্থিত এবং তরুণীর গালে হাত রাখার ভঙ্গিটিও অপ্রাকৃতিক, যা এআই-তৈরি কন্টেন্টের বৈশিষ্ট্য। যাচাইয়ে আরও জানা গেছে, আসিফ মাহমুদের একটি ছবি এবং ওই নারীর আরেকটি আলাদা ছবি ব্যবহার করে প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী হাইভ মডারেশন টুলের বিশ্লেষণে ছবিটি ৯৯ শতাংশ এআই-তৈরি বলে জানা যায়।
তরুণীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
গত সেপ্টেম্বরে এক তরুণীর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ছবি দাবি করে দুইটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে ছবিগুলো বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে। ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে এতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। প্রচারিত ছবিগুলোর ডানপাশের নিচে গুগলের এআই টুল জেমিনির লোগোর জলছাপ দেখতে পাওয়া যায়। ছবিগুলো এআই ও ডিপফেক কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ যাচাই করলে এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে দেখা যায়।
অর্থ উপদেষ্টা সরকারি বিনিয়োগ প্লাটফর্মে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, অর্থ উপদেষ্টা সরকারি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মে অর্থ বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন এবং প্রতি সপ্তাহে মোটা অঙ্কের আয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তবে দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ভিডিওকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিকৃত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে সালেহউদ্দিন আহমেদের উচ্চারণে কৃত্রিমতা পরিলক্ষিত হলে তাঁর একাধিক ভিডিও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এই ভিডিওর সাথে তাঁর কথা বলার ধরণের পার্থক্য রয়েছে। আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকারী ওয়েবসাইট Resemble AI এ অডিও ক্লিপটি যাচাই করলে অডিওটিকে ‘Fake’ বলে চিহ্নিত করা হয়। আরেক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকারী ওয়েবসাইট হাইভ মডারেশনে এ যাচাই করে ভিডিও ক্লিপটিকে আসল বলা হলেও অডিও ক্লিপটিকে প্রায় ১০০ শতাংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তা তৈরি বলে চিহ্নিত করা হয়।
৫ই আগস্ট পুলিশ হত্যা দিবসে পুলিশ হত্যার বিচার হবে বলে সেনাপ্রধানের বক্তব্য
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৫ আগস্টকে পুলিশ হত্যা দিবস উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ভিডিওটি বাস্তব নয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। তাছাড়া, সেনাপ্রধান এমন বক্তব্য দিলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো। গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে তাঁর এমন বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভিডিওটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৪ শতাংশ।
জনতার সেনাপ্রধান বিরোধী স্লোগান
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের স্লোগানের ভিডিও। তবে ভিডিওটি বাস্তব কোনো দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর অডিও ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা লেখা থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
এক সেনাসদস্য পুলিশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে বক্তব্য রাখছেন
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, একজন সেনা সদস্য বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন। ভিডিওতে ওই ব্যক্তি বলতে শোনা যায়, “পুলিশ যদি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করে, তবে দেশকে শোধরানো অসম্ভব। পুলিশ চাইলে তিন দিনে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারে, কারণ দুর্নীতিবাজরা পুলিশের আশ্রয় নেয়। সেনাবাহিনী ফিরে যাবে, কিন্তু দেশের মানুষকে পুলিশকেই সামলাতে হবে।” তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। এতে পুলিশ সদস্যের কণ্ঠস্বর, মুখের অভিব্যক্তি, শারীরিক গঠন এবং ঠোঁটের অস্বাভাবিক নড়াচড়ায় এআই-তৈরি কন্টেন্টের বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। এছাড়া, ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলের বিশ্লেষণেও ভিডিওটি ৯৯ শতাংশ এআই-তৈরি বলে জানা যায়।
শেখ হাসিনাকে নতুন সেনাপ্রধানের কঠোর হুশিয়ারি
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, নতুন সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। ভিডিওটিতে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “যিনি মোদির কোলে বসে বলেন টুপ করে দেশে ঢুকবেন। আপনি আসেন, পিলখানা, শাপলা, জুলাইয়ের হিসেব পই পই করে হবে। We stand United to defend our nation’s sovereignty, prepared for any challenge that may arise”। ভিডিওটিতে ৮ সেকেন্ড পর ভিন্ন ফ্রেমে অপর এক ব্যক্তিকে কথা বলতে শোনা যায়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভিডিওর ব্যক্তি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নন। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর কণ্ঠস্বর, সেনাবাহিনীর পোশাক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা লেখা থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্য ১৬ সেকেন্ড এবং ৮ সেকেন্ড পর ফ্রেম পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
সিলেটে পাথর চুরি প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলের সমালোচনা সেনা সদস্যের
গত আগস্টে সিলেটে আলোচিত সাদা পাথর চুরি প্রসঙ্গে সেনা সদস্যদেরর বক্তব্য দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। সেখানে তারা পাথর চুরি প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় আসলে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি বানোয়াট ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে সেখানকার কণ্ঠস্বর সহ এআইজনিত বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। বিষয়টি নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলের সাহা্য্যে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই-নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা ৮১ শতাংশ।
“চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পুলিশের, আমাদের নয়” বলেছেন সেনা সদস্য
চলতি বছরের আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে এক সেনা সদস্যের সঙ্গে সাংবাদিকের কথোপকথনের দৃশ্য এটি। ভিডিওটিতে এক সাংবাদিক সেনা সদস্যকে প্রশ্ন করেন, “আপনারা থাকতে দেশে এতো চাঁদাবাজি হচ্ছে! ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?” প্রত্যুত্তরে সেনা কর্মকর্তা বলেন, “চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পুলিশের, আমাদের নয়।” তবে এই ভিডিওটি বাস্তব নয়, আদতে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। বিশ্লেষণে ভিডিওটিতে এআইজনিত বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। তাছাড়া, ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
গাজীপুরে সামরিক যানে মিসাইল বহন
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি ঢাকার গাজীপুরে সামরিক যানে মিসাইল বহনের দৃশ্য। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত এই ভিডিওর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘MINIMAX | Hailuo Ai’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Hailuo Ai’ মিনিম্যাক্স নামের একটি চাইনিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৬ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৬ সেকেন্ড। এছাড়া, ভিডিওটিতে গাড়ির নাম্বার প্লেটে অসঙ্গতিসহ রাস্তার আশেপাশে বেশিরভাগ সাইনবোর্ডে GAZIPUR শব্দ লেখা দেখা যায়, যা অস্বাভাবিক। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্ সাহায্যে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
‘৫ই আগস্ট অভ্যুত্থান দিবস হতে পারে না, একদিনে ৩২০০ পুলিশ সদস্যকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে’ বলে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য
গত ৫ আগস্ট ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়ানো হয়, যেখানে পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি একজন সাংবাদিককে বলছেন, “আজ ৫ই আগস্ট অভ্যুত্থান দিবস হতে পারে না। আজ একদিনে ৩২০০ পুলিশ সদস্যকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। তাই, আজ পুলিশ হত্যা দিবস।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কণ্ঠস্বর সহ আইজনিত একাধিক অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ মূলত গুগলের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা লেখা থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
৫ই আগস্ট পুলিশ হত্যা দিবসে বিচারের আশ্বাস দিয়ে আইজিপির বক্তব্য
গত ৫ আগস্ট ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, আইজিপি বাহারুল আলম ৫ আগস্টকে পুলিশ হত্যা দিবস উল্লেখ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, পুলিশ প্রধান এমন বক্তব্য দিলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো। গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে তাঁর এমন বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্সে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৪ শতাংশ।
পুলিশের সামনে আসামীর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে হাতকড়া পরানো এক আসামীর মাথায় পেছন থেকে এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শিক্ষার্থী হত্যার মামলার আসামি জুনেলকে আদালতে হাজির করার একটি ছবিকে বিকৃত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সমকাল এর ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে ভিডিওর আসামি ও পুলিশ সদস্যদের ছবিটি পাওয়া যায়। দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর দৃশ্য এবং গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবি একই স্থানের। বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘MINIMAX | Hailuo Ai’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Hailuo Ai’ মিনিম্যাক্স নামের একটি চাইনিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৬ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৬ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্সে ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ।
গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় সেনাপ্রধানকে দায়ী করে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে দোষারোপ করে বাংলাদেশ পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করেছে বলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কথিত এই সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্লেষণে ভিডিওতে এআই-জনিত কিছু অসঙ্গতি পাওয়া। যেমন – পুলিশের পোশাক, কণ্ঠস্বর, বুমে অজ্ঞাত গণমাধ্যমের লোগো। পাশাপশি ভিডিওটির নিচের ডান কোণে গুগলের জেনারেটিভ টুল ‘Veo’র লোগো দেখা যায়, veo টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির প্রত্যেকটি অংশের দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
এক পুলিশ সদস্য আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করে বিএনপির সমালোচনা করছেন
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয়, এক পুলিশ সদস্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তুলনা করে বিএনপির সমালোচনা করছেন। তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। কোনো গণমাধ্যমে এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তার মন্তব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ভিডিওটির কণ্ঠস্বর, মুখভঙ্গি এবং অন্যান্য উপাদানে এআই-এর বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এর সংবাদ সম্মেলনের পেছনের বাংলা লেখা বিকৃতভাবে দেখা যায়, যা সাধারণত এআই-তৈরি কন্টেন্টে প্রায়শই দেখা যায়। এআই টুলগুলোর বাংলা ভাষায় সীমিত দক্ষতার কারণে এ ধরনের ত্রুটি ঘটে। এছাড়া, ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলের বিশ্লেষণেও ভিডিওটি ৯৯ শতাংশ এআই-তৈরি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখ কিনা তা নিয়ে পুলিশ সদস্যের সন্দেহ
গত আগস্টে ইন্টারনেটে ছড়ানো একটি ভিডিওতে এক পুলিশ সদস্যকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ কিনা তা নিয়ে তাকে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তবে পুলিশ সদস্যের বক্তব্যের ভিডিওটি আসল নয় আদতে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৬.৯ শতাংশ।
‘প্রবাসীদের সাথে চাঁদাবাজি হয়’ বলে পুলিশের বক্তব্য
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো একটি ভিডিওর শুরুর ৮ সেকেন্ড সময়ে এক পুলিশ সদস্যকে বলতে দেখা যায়, “ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, নেপাল থেকে প্রবাসে আসতে খরচ হয় ১ লক্ষ টাকা। আর আমাদের বারো আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ থেকে প্রবাসীদের আসতে খরচ হয় ৫ লক্ষ টাকা।”
পরের ৯ সেকেন্ড সময় হতে ভিন্ন আরেক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, “চাঁদাবাজি শুধু রাস্তায় হয়না, প্রত্যেকটা প্রবাসীর সাথে হয়। এ দালালদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে। প্রত্যেকটা প্রবাসীর পক্ষ থেকে আমার এই দাবি।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় আসলে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি বানোয়াট ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে পুলিশ সদস্যদের কণ্ঠস্বর এবং মুখভঙ্গিতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।
সরকারকে ‘চোর’ ও জনগণকে ‘ডাকাত’ অভিহিত করে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এক পুলিশ কর্মকর্তা একটি আলোচনা সভায় জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সমালোচনা করে সরকারকে চোর ও জনগণকে ডাকাত বলে অভিহিত করেছেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়, আসলে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি বানোয়াট ভিডিও। ভিডিওটির মূল সংস্করণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রচারকারী ভিডিওটিকে এআই জেনারেটেড কন্টেন্ট বলে লেভেল করেছেন। অর্থাৎ, এটি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি তা এতে স্পষ্ট।
‘বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই আওয়ামী লীগের ১৭ বছরকেও হার মানাচ্ছে’ বলেছেন পুলিশ সদস্য
গত আগস্টে “বিএনপিকে বাঁশ দিলো পুলিশ অফিসার” শিরোনামে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য বলে দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। ভিডিওটিতে এক পুলিশ সদস্য বলছেন, “চাকরি চলে যেতে পারে তবুও বলি, একটা দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগে যা শুরু করেছে তা আওয়ামী লীগের ১৭ বছরকেও হার মানাচ্ছে। ভোট না দিলে তারা নাকি মানুষকে জান নিয়ে ঘরে ফিরতে দিবে না। এদেরকে জাহেল বললেও কম হবে।” তবে ভিডিওটি আসল নয়, আদতে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। এটি পর্যবেক্ষণ করে এতে একাধিক এআইজনিত অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৩ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
পাথর লুটপাটকারীদের পুলিশের আটক করার ছবি
গত আগস্টে পাথরসহ পুলিশের সাথে কয়েকজন ব্যক্তির একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, পুলিশ পাথরসহ এদেরকে আটক করেছে। তবে ছবিটি বাস্তব নয়, আসলে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ছবি। ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে এতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ছবিটির ডান পাশের নিচের অংশে ‘ai’ লেখা সম্বলিত জলছাপ দেখতে পাওয়া যায়। গুগলের এআই টুল ব্যবহার করে কোনো ছবি তৈরি করলে সেখানে এমন জলছাপ দেখা যায়।
‘দেশটা আপনার বাপের সম্পত্তি না, লুটপাট বন্ধ করেন’ বলেছেন র্যাব সদস্য
গত জুলাইয়ে, “দেশটা আপনার বাপের সম্পত্তি না, এইটা আমাদের সবার। লুটপাট বন্ধ করেন ভাই, দিন শেষ হইছে। চেয়ারটা সাময়িক ভাই, কিন্তু বদনামটা চিরস্থায়ী। কিছু তো লজ্জা করেন!” শিরোনামে র্যাব সদস্যের বক্তব্য দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। বিশ্লেষণে ভিডিওটি বাস্তব বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওতে র্যাব সদস্যের পেছনের মানুষগুলোর অস্বাভাবিক নড়াচড়া সহ এআইজনিত অন্যান্য অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
‘ধানের শীষে ভোট দিন, নিজের লাশ বুঝে নিন। যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন’
গত জুলাইয়ে বিএনপিকে নিয়ে এক ব্যক্তি জনসভায় “ধানের শীষে ভোট দিন, নিজের লাশ বুঝে নিন। যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন।” বলে বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়েছে। তবে ভিডিওটি আসল নয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বক্তব্য দেয়া ব্যক্তিকে বক্তব্যের সময় চোখের পলক ফেলতে দেখা যায়নি যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ দেখা যায়। ‘Veo’ হলো গুগলের একটি অত্যাধুনিক এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই টুল দিয়ে তৈরি ভিডিওতে সাধারণত ‘Veo’ জলছাপ থাকে। এই ভিডিওটিতেও ‘Veo’ জলছাপ রয়েছে এবং এর দৈর্ঘ্য ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
সাধারণ জনগণ বলছেন- ‘বিএনপির গুণ, নয় মাসে দেড়শ খুন
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে এক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণের বক্তব্য শুনুন বাস্তব ও সত্য কথা।” ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তির “চাচা, বিএনপির গুণ কী কী” প্রশ্নের জবাবে অপর এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “বিএনপির অনেক গুণ, নয় মাসে দেড়শ খুন৷ চাঁদা তুলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটিতে ‘AI Manob’ লেখা জলছাপ পাওয়া যায়। এই নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে গত ০১ জুলাই একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে সেখানে বিভিন্ন সময়ে এআই দিয়ে তৈরি একাধিক ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “ক্যান্টিলাক্স” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। এছাড়াও, এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম “হাইভ মডারেশন” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৭ শতাংশ।
রুমিন ফারহানা ও ড. জাহেদের অন্তরঙ্গ ছবি
গত সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান ও বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানার আলিঙ্গনরত কথিত একটি ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, রুমিন ফারহানা ও জাহেদ উর রহমানের পৃথক দুটি ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, আলোচিত ছবিটি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, এর নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের জলছাপ দেখা যায়। জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট গুগল ডিপমাইন্ড ‘ন্যানো বানানা’ নামে একটি উন্নত ইমেজ এডিটিং মডেল উন্মোচন করেছে, যা বর্তমানে গুগলের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট জেমিনির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এই মডেল ব্যবহারকারীদের উন্নত ও সৃজনশীলভাবে ছবি সম্পাদনার সুযোগ প্রদান করে। এর একটি বিশেষ ফিচার হলো ‘ব্লেন্ড ফটোস টুগেদার’, যার মাধ্যমে পৃথকভাবে তোলা একাধিক ছবি একত্রিত করে নতুন একটি দৃশ্য তৈরি করা সম্ভব।
কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর ফরিদকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে যমুনা টিভির নাম ও লোগো সম্বলিত একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, তারেক রহমানের নির্দেশে কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর ফরিদকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি ভিডিওকে যমুনা টিভির বাস্তব সংবাদ প্রতিবেদন বলে প্রচার করা হয়েছে। যমুনা টিভির ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে কথিত এই সংবাদ প্রতিবেদনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে উপস্থাপকের অঙ্গভঙ্গি, কথা বলার ধরণ ও সংবাদ উপস্থাপনার ধরণে অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে যমুনা টিভির শিফট ইনচার্জ মিশুক নাজিবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৮ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে তিনি বলেন, “যমুনা টেলিভিশনের লোগো ব্যবহার, প্রেজেন্টারের ছবি ভার্চুয়ালি উপস্থাপন এবং Tarique Rahman এর নাম ব্যবহার করে বিএনপি নেতা আলমগীর ফরিদ কক্সবাজার-২ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন দাবি করে যে ভিডিওটি ছড়ানো হচ্ছে তা এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি। ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান থাকলেই বুঝা যাবে, এআই কন্টেন্টটি যে ভুয়া।”
‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’ লেখা প্লেকার্ড হাতে শিক্ষার্থীদের ছবি
এক শিক্ষার্থীর হাতে ‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’ লেখা যুক্ত প্লেকার্ডের একটি ছবি গত আগস্টে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পরিহিত কিছু শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের মধ্যে সামনের জন প্লেকার্ডটি ধরে আছেন। তবে এটি বাস্তব কোনো ছবি নয়। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি বিশ্লেষণে এতে একাধিক অসঙ্গতি পাওয়া যায়। আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বিশাল মিছিল
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মিছিলের ভিডিও এটি। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তার ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে কিছু অসঙ্গতি দেখা যায়। আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্সে ভিডিওটি যাচাই করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ বলে জানা যায়। তাছাড়া, আরেক এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Resemble AI এ ভিডিওটির অডিও ক্লিপটি যাচাই করলে এটিকে ‘Fake’ বলে চিহ্নিত করা হয়।
দেয়ালে শিক্ষার্থীদের শেখ হাসিনার গ্রাফিতি অঙ্কন
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, শিক্ষার্থীরা দেয়ালে শেখ হাসিনার গ্রাফিতি অঙ্কন করেছে। তবে ছবিগুলো বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ভুয়া ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
ছবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ছবিগুলোর পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে খানিকটা অস্বাভাবিকতা রয়েছে যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি ছবিতে পরিলক্ষিত হয়। একটি ছবিতে এক শিক্ষার্থীর আঙুলের গড়নে অসঙ্গতি রয়েছে। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্স এ ছবিগুলো পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৬ শতাংশ।
“আওয়ামী লীগ ফিরে আসলে আপনাদের কেয়ামত পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে”
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “আওয়ামী লীগ হয়তো একদিন এমনভাবে ফিরে আসতেছে তখন আপনাদের কেয়ামত পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এখনো সময় আছে ভাই জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করেন।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কথা বলা ব্যক্তির পেছনে থাকা ব্যক্তিকে নড়াচড়া কিংবা চোখের পলক ফেলতে দেখা যায়নি এবং বক্তব্য দেয়া ব্যক্তির মুখ নড়লেও চোখের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ হলো গুগলের একটি অত্যাধুনিক জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই টুল দিয়ে তৈরি ভিডিওতে সাধারণত ‘Veo’ জলছাপ থাকে। এই ভিডিওটিতেও ‘Veo’ জলছাপ রয়েছে এবং এর দৈর্ঘ্য ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
“১৭ বছর মনে করেছিলাম আওয়ামী লীগ খারাপ, কিন্তু আমরাই ভুল করছিলাম আওয়ামী লীগকে তাড়াই দিয়ে”
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, একজন রিকশাওয়ালা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলছেন। রিকশাওয়ালাকে বলতে শোনা যায়, “১৭ বছর মনে করেছিলাম আওয়ামী লীগ খারাপ। কিন্তু এই এক বছরে যা দেখলাম, তাতে বুঝি গেলাম আসলে আওয়ামী লীগই ভালো ছিল। আমরাই ভুল করছিলাম আওয়ামী লীগকে তাড়াই দিয়ে।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সাহায্যে তৈরি। ভিডিওটিতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি দেখা যায়। ভিডিওটিতে গুগলের অত্যাধুনিক জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। পরবর্তীতে, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
‘আওয়ামী লীগ পরিচয় দিলেই মার খেতে হয়’
‘আওয়ামী লীগ পরিচয় দিলেই মার খেতে হয়’ বলে এক ব্যক্তি বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে একটি ভিডিও গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে বক্তব্যরত ব্যক্তিকে কথা বলার সময় চোখের পলক ফেলতে দেখা যায় নি এবং উক্ত ব্যক্তির মুখ নড়লেও চোখের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। এছাড়া, ভিডিওটিতে গুগলের অত্যাধুনিক জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। পরবর্তীতে, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
‘আওয়ামী লীগ দেশের উন্নতি করেছে, পালিয়ে না গেলে বুঝতাম না’ বলেছেন এক রিকশাওয়ালা
“রিক্সাওয়ালার মুখে দেশের উন্নয়নের কথা” শিরোনামে একটি ভিডিও গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। ভিডিওটিতে একজন নারী এক রিকশাওয়ালাকে প্রশ্ন করতে দেখা যায়, তিনি বলেন, “ভাই, আওয়ামী লীগ যত দুর্নীতি করেছে এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?” প্রশ্নের জবাবে একজন রিকশাওয়ালাকে বলতে শোনা যায়, “কে বলেছে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করেছে? আওয়ামী লীগ দেশের উন্নতি করেছে। এটা আওয়ামী লীগ পালিয়ে না গেলে আমরা বুঝতাম না।”
বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। এছাড়াও, ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “হাইভ মডারেশন” এ পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।
সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগকে আবার সরকারে চায়
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে “সাধারণ জনগণের কথা” শিরোনামে কয়েকজন ব্যক্তির স্লোগান দেওয়ার একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তির “তোমরা সবাই কী চাও?” প্রশ্নের জবাবে বাকিদের বলতে শোনা যায়, “আমরা চাই আওয়ামী লীগ আবার সরকারে ফিরুক। শান্তি চাই। উন্নয়ন চাই। আওয়ামী লীগ চাই।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “ক্যান্টিলাক্স” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।
নদীপথে নৌকার বিশাল মিছিল
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয়, এটি নদীপথে নৌকার মিছিলের দৃশ্য। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর বিভিন্ন উপাদানে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন ব্যক্তির নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা, তাদের নড়াচড়া সহ পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোতে অস্বাভাবিকতাদেখা যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ ‘আত্মীয়ভিত্তিক দল নয়’ বলে কর্মীদের উদ্দেশ্যে পুতুলের ভিডিওবার্তা
গত সেপ্টেম্বরে ‘শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল দল নিয়ে কথা বললেন, কর্মীদের কাছে থেকে নিতে চাইলেন পরামর্শ।’ ও ‘আমরা কর্মী ভিত্তিক দল গঠন করব আর আত্মীয় ভিত্তিক দল নয়।’ ক্যাপশনে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বক্তব্য হিসেবে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে বিশ্লেষণ প্রমাণ মিলেছে যে, ভিডিওটি বাস্তব নয়। আলোচিত ভিডিওটিতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের দাঁতের গঠনে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, যা স্বাভাবিক মানুষের দাঁতের গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আদতে পুতুলের ভিন্ন একটি ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ঢাকায় ‘শেখ হাসিনা বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ স্লোগানে আওয়ামী লীগের মিছিল
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিলের দৃশ্য। ভিডিওতে ‘শেখ হাসিনা বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে মিছিলে থাকা ব্যক্তিদের মুখের সাথে স্লোগানের অমিল এবং মুখাভঙ্গির অসঙ্গতি পাওয়া যায়। আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমেছে
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, জয় বাংলা স্লোগানে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে গিয়েছে। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। মিছিলে থাকা প্লেকার্ডের টেক্সটও অর্থপূর্ণ কোনো বাক্য বা শব্দের নয়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শিবলি সাদিককে জনগণ আবারও এমপি হিসেবে দেখতে চায়
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শিবলী সাদিককে সাধারণ মানুষ আবারও এমপি হিসেবে দেখতে চায়। ভিডিওটিতে বুম মাইক্রোফোন হাতে একজন রিপোর্টারকে বলতে শোনা যায়, “সাধারণ মানুষ দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক ভাইকে আবার এমপি হিসেবে চায়।” এরপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি বলেন, “হ্যাঁ, আমরা তাঁকেই চাই।” এরপর উপস্থিত দর্শকদের করতালি দিতে দেখা যায়। বিশ্লেষণে ভিডিওটি বাস্তব না হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটিতে সাংবাদিকের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের করতালি দেওয়ার সময় হাতের অস্বাভাবিক নড়াচড়া দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ রয়েছে। এটি টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৮১ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
পুতুল হাসিনার সাথে দেখা করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন
শেখ হাসিনার মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল মায়ের সাথে দেখা করেছেন বলে একটি ভিডিও গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়েছে। তবে বিশ্লেষণ প্রামাণ পাওয়া গেছে যে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। গণমাধ্যম কিংবা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্রেও এই ভিডিওর বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুতুলের কথা বলার সময় তার এবং পাশে থাকা শেখ হাসিনার মুখের নড়াচড়া সহ পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোয় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। অন্তত ২০২৩ সাল থেকে অনলাইনে থাকা একটি ছবি ব্যবহার করে ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
শেখ হাসিনার জন্মদিনে পুতুল দোয়া চেয়েছেন
গত সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার জন্মদিনে মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল মাকে পাশে রেখে মায়ের জন্য দোয়া চেয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে বিশ্লেষণে ভিডিওটি বাস্তব নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর উপাদানগুলোতে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে পরিলক্ষিত হয়। পুতুলের কথা বলার সময় তার মুখভঙ্গি ও নড়াচড়া এবং পাশে থাকা শেখ হাসিনার মুখভঙ্গি ও নড়াচড়া সহ অন্যান্য বিষয়ে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। অন্তত ২০২১ সাল থেকে অনলাইনে থাকা একটি ছবি ব্যবহার করে ডিপফেক প্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে পুতুল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভিডিওবার্তা দিয়েছেন
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দলের নেতাকর্মীদের দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ভিডিওবার্তা প্রচার করেছেন। ভিডিওতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বলতে শোনা যায়, “আমি পুতুল। আমাদের নেতাকর্মীদের জানাই শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা। আমার মা দেশে থাকলে পূজা আরো জমজমাট হতো। মা বাংলাদেশের পূজাকে খুব মিস করছে। মা এবার ভারতেই পূজার আনন্দ উপভোগ করবে। মায়ের জন্য দোয়া করবেন। সামনে পূজায় আমরা সবাই একসাথে আনন্দ করব। আমরা একসাথে পূজা উদযাপন করব। এজন্যই মা বলতো ধর্ম যার যার উৎসব সবার।” তবে ভিডিওটিও বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হয়ে তার দেওয়া একটি ভিডিওবার্তার ফুটেজকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ডিপফেক-ও-মিটার এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৫ শতাংশ।
পুতুল দেশে ফিরে আ.লীগের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন
সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন জানিয়ে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন দাবি করে গত সেপ্টেম্বরে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। ভিডিওটিতে কথিত সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বলতে শোনা যায়, “আমার নাম পুতুল। তারেক রহমানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ থাকলে সেটা আমি। আপনারা কি বলেন? আমি দেশে ফিরে আসবো, দলের দায়িত্ব নেবো। এবং খুব শীঘ্রই কিছু করবো ব্যাস। আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাকে নিজেই রাজনীতির দায়িত্ব নিতে হবে। ববি আর জয়কে দিয়ে কিছুই হবেনা।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পুরোনো একটি ছবি ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় ভয়েসওভার যুক্ত করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ হরতাল পালনের ডাক দিয়েছে
নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। এতে ভাঙ্গায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরই প্রেক্ষিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের হরতাল পালনের দৃশ্য। তবে এটিও বাস্তব নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভিডিওটির উপাদানগুলোতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
জামায়াত-শিবির বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করে হয়, এটি জামায়াত-শিবির বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্য। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বেশ কিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া বিক্ষোভ মিছিলের ব্যানারগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এতে থাকা লেখা অর্থপূর্ণ নয়। সবগুলো ব্যানারের লেখা-ই বিকৃত। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি, কেননা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় বাংলা লেখা সম্বলিত কোনো ব্যানার বা ছবি তৈরি করতে গেলে লেখাগুলো বিকৃত হয়ে যায়।
ছাত্রীসংস্থার মেয়েরা বলছেন, জামায়াত নেতারা তাদেরকে ভোগ করতে চায়
গত জুলাইয়ে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয় যেখানে একটি গলির মধ্যে হিজাব পরিহিত কয়েকজন তরুনীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে সামনের তরুণীকে বলতে শোনা যায়, “জামাতি ভণ্ড নেতারা ছাত্রী সংস্থার মেয়েদের ভোগ করতে চায়।” তবে এটি বাস্তব কোনো ভিডিও নয়, আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওর তরুণীদের দাঁড়ানোর ভঙ্গি, কণ্ঠস্বর, এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে ভিডিওটিকে বাস্তব নয় বরং এআইজনিত লক্ষ্যণ পরিলক্ষিত হয়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করলে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৮ শতাংশ বলে ফলাফল আসে। তাছাড়া, ভিডিওটির দৈর্ঘ ৮ সেকেন্ড হওয়ায় এটি গুগলের অত্যাধুনিক এআই টুল Veo দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ‘Veo’ টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম।
মুক্তিযুদ্ধকে জড়িয়ে ইসলামি বক্তার জামায়াতবিরোধী বক্তব্য
সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, সাদা পাঞ্জাবি ও পাগড়ি পরিহিত এক ব্যক্তির মঞ্চে বসে জামায়াত বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, “জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করেছিল, মা-বোনদের ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। জামায়াতকে ভোট দেবে না আলেম সমাজ।” তবে ভিডিওটি কোনো ইসলামি বক্তার বাস্তব বক্তব্যের নয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটির বিভিন্ন ফ্রেম বিশ্লেষণে, মুখমণ্ডলের বিকৃতি, চোখ ও ঠোঁটের অস্বাভাবিক গঠন, আলো ছায়ার ভারসাম্যহীনতা, চুল ও ব্যাকগ্রাউন্ডে অতিরিক্ত মসৃণতার মতো এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওর একাধিক সাধারণ লক্ষণ এই ভিডিওতে লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া, ভিডিওটির দৈর্ঘ্য ৮ সেকেন্ড, যা গুগলের এআই ভিডিও জেনারেশন টুল ‘Veo’-এর সঙ্গে মিলে যায়। এই টুল দিয়ে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করা সম্ভব এবং সম্প্রতি এর মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও ছড়ানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তাসনিম জারা প্রকাশ্যে হাফপ্যান্ট পরেছেন
গত জুলাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারার হাফপ্যান্ট পরিহিত একটি ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে ছবিটি বাস্তব নয়। বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ফুল প্যান্ট পরা একটি ছবি সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। ‘Fariha Nishat’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, তাসনিম জারার সঙ্গে তার তোলা একটি ছবি বিকৃত করে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পোস্টটিতে ভাইরাল ছবির পাশাপাশি মূল ছবিটিও যুক্ত করা হয়, যেখানে দুজনকে ফুল প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। এছাড়া ভাইরাল ছবিতে তাসনিম জারার হাতের আঙুলগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বিকৃতভাবে দেখা যায়, যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন এআই টুলের মাধ্যমে ছবির প্রেক্ষাপট অপরিবর্তিত রেখে পোশাক বা নির্দিষ্ট উপাদান সহজেই পরিবর্তন করা সম্ভব।
ছাগল চুরির সময় সিসিটিভি ক্যামেরায় নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ধরা পড়েছে
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, ছাগল চুরির মুুহুর্তে সিসিটিভি ক্যামেরায় জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীকে দেখতে পাওয়া গেছে। তবে ছবিটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, এর নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের জলছাপের অংশবিশেষ দেখা যায়। জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট গুগল ডিপমাইন্ড ‘ন্যানো বানানা’ নামে একটি উন্নত ইমেজ এডিটিং মডেল উন্মোচন করেছে, যা বর্তমানে গুগলের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট জেমিনির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এই মডেল ব্যবহারকারীদের উন্নত ও সৃজনশীলভাবে ছবি সম্পাদনার সুযোগ প্রদান করে। পরবর্তীতে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় নির্মিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ডিপফেক-ও-মিটার এ ছবিটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৩.৪৬ শতাংশ।
ঢাবি শিক্ষক মোনামী ও ডাকসু এজিএস মহিউদ্দিনের আলিঙ্গনরত ছবি
গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া মোনামী ও ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মো. মহিউদ্দীন খানের আলিঙ্গনরত একটি ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে আলোচিত ছবিটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, মোনামী ও মহিউদ্দিনের প্র্থক দুটি ছবিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে এর নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের জলছাপ দেখা যায়। জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট গুগল ডিপমাইন্ড ‘ন্যানো বানানা’ নামে একটি উন্নত ইমেজ এডিটিং মডেল উন্মোচন করেছে, যা বর্তমানে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল জেমিনির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এটি ব্যবহারকারীদের উন্নত ও সৃজনশীলভাবে ছবি সম্পাদনার সুযোগ প্রদান করে। এর একটি বিশেষ ফিচার হলো ‘ব্লেন্ড ফটোস টুগেদার’, যার মাধ্যমে পৃথকভাবে তোলা একাধিক ছবি একত্রিত করে নতুন একটি দৃশ্য তৈরি করা সম্ভব।
ডাকসুর ফাতিমা তাসনিম জুমার আপত্তিকর ছবি
গত সেপ্টেম্বরে ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমার ব্যক্তিগত ছবি দাবিতে দুইটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে ছবিগুলো ফাতিমা তাসনিম জুমার নয়। আদতে ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন দুই নারীর ছবি সংগ্রহ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে জুমার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরায় মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ভিডিও
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়। সেই বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য দাবি করে একটি ভিডিও গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে এর ডানদিকে নিচে ‘Veo’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ এর বিষয়ে জানা যায়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই টুল। যার সাহায্যে লেখা থেকে শব্দসহ ভিডিও তৈরি করা যায়। এছাড়া, ঘটনাস্থল মাইলস্টোন কলেজ হলেও ছড়ানো ভিডিওর ভবনের দেয়ালে ইংরেজিতে ‘Untie College’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়, যা অপ্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ, ভিডিওটি বাস্তব নয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরায় মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ছবি
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ধারণকৃত। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি। ছবিটি পর্যবেক্ষণে এতে আগুন ও ধোঁয়ার অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। তাছাড়া, সেখানে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ছিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান। তবে আলোচিত ছবির বিমানের সাথে এর গঠনগত পার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের ছবি
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা হিসেবে গত জুলাইয়ে একটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে তালিকাটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ছবি সম্বলিত ভুয়া এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে এতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের চেহারা প্রায় একইরকম। তাছাড়া, স্কুলের নামের বানান এবং অর্থবোধকতায়ও অসঙ্গতি পাওয়া যায়, যা সাধারণত এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি ছবিতে দেখা যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলটের স্ত্রীর আবেগঘন বক্তব্য
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পাইলট তৌকির ইসলাম নিহত হন। পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিও দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। ভিডিওটিতে কথিত নারীকে বলতে শোনা যায়, “আমি কখনও ভাবিনি, এত তাড়াতাড়ি আমার স্বামীকে হারাবো। ওকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। তৌকিরকে আপনারা ক্ষমা করে দিন। আই নেভার থট ইন মাই ড্রিম আই উড লুজ মাই হাজব্যান্ড সো কুইকলি। উই হেড মেনি ড্রিমস। প্লিজ এভ্রিওয়ান, ফরগিভ তৌকির।” তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে প্রদর্শিত নারীর অঙ্গভঙ্গি, মুখমণ্ডলের গঠন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। “৬ মাস আগে বিয়ে করেন বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট তৌকির” শিরোনামে প্রকাশিত আরটিভির প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তাঁর স্ত্রীর ছবিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সম্পাদনার মাধ্যমে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষক মেহেরীন চৌধুরীর শেষ বক্তব্য
গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আগুনের হাত থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। এরই প্রেক্ষিতে, মেহেরীন চৌধুরীর ‘শেষ বক্তব্য’ হিসেবে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি মেহরিন চৌধুরী আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি আপনাদের সন্তানদের কিছু হয় তবে আপনাদের আমার ওপর দিয়ে যেতে হবে। আপনার সন্তানদের রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। বিপদে-আপদে তাদের পাশে সবসময় থাকব।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। এটি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এআই-জনিত একাধিক অসঙ্গতি পাওয়া যায়। কথিত মেহেরীন চৌধুরীর মুখভঙ্গি, কথা বলার সময় ঠোঁট ও চোয়ালের নড়াচড়া, চোখের পলক এবং আঙ্গুলের অস্বাভাবিক দেখা যায়। মূলত মেহরীন চৌধুরীর ভিন্ন একটি বক্তব্যের ভিডিওকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ডিপফেক শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
শিক্ষার্থীদের ‘JULY CDi’ গ্রাফিতি অঙ্কণ
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, শিক্ষার্থীরা দেয়ালে ‘JULY CDi’ নামের গ্রাফিতি অঙ্কন করেছেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্লেষণে ভিডিওটিতে এআইজনিত বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে ৬টি আঙুল দেখা যায়। তাছাড়া, ভিডিওটিতে গুগলের ‘Veo’ জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল, যা লেখা থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮০.৯ শতাংশ।
নুরকে হত্যা করতে ভারতীয় ‘র’ সদস্য শিব সংকর দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়
গত ২৯ আগস্ট রাতে বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলপ্রয়োগ করলে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন। এরই প্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে এক ব্যক্তির ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়, তাঁর নাম শিব সংকর দাস। তিনি ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র এর সদস্য। নুরকে হত্যা করতে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে ছবিটি শিব শংকর দাস নামে কারোর নয়। প্রকৃতপক্ষে পল্টন থানার ওসির গাড়িচালক পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা ছবিকে শিব শংকর দাসের ছবি বলে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে মুখমন্ডলের গঠন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি ছবিতে দেখা যায়। এ থেকে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিটি মূলত কনস্টেবল মিজানুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তীতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে ছবিটি যাচাই করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭৯.৭ শতাংশ দেখা যায়। এছাড়াও, এআই ও ডিপফেক কন্টেন্ট শনাক্তকরণ আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এ ছবিটি বিশ্লেষণ করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি বা ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়।
গাইবান্ধায় দুর্গাপূজার প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার হামিন্দপুর (কামারপাড়া) এলাকায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে তৈরি করা প্রতিমায় দুবৃত্তরা আগুন দিয়েছে। তবে ছবিটি বাস্তব নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ছবি। কোনো গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্রে ছবির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে একাধিক এআইজনিত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট হাইভ মডারেশনে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৮ শতাংশ।
ছবিটি ভিন্ন আরেক এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
বয়স্ক ব্যক্তির ‘অবুঝ ছাত্ররা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে দেশ ধ্বংস করেছে’ বলে মন্তব্য
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একজন বয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। যেখানে সাংবাদিক তাঁর কাছে ৫ আগস্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ‘অবুঝ ছাত্ররা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে দেশ ধ্বংস করেছে’ বলে মন্তব্য করেন। তবে এটিও বাস্তব কোনো ভিডিও নয়। ভিডিওটিতে বেশ কিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ভিডিওটির নিচের অংশে দেখতে পাওয়া বাংলা লেখাগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ যার কোনো অর্থবোধকতা নেই। ভিডিওটিতে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ দেখা যায়। veo টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭৩ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
‘‘৫ তারিখ না আসলে বুঝতাম না টোকাই কেমনে নেতা হয়’’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এক ব্যক্তি নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছেন বলে “৫ তারিখ না আসলে বুঝতাম না” শিরোনামে একটি ভিডিও গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। ভিডিওটিতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘৫ তারিখ না আসলে বুঝতাম না টোকাই কেমনে নেতা হয়।’’ তবে ভিডিওটি আসল নয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কথা বলা ব্যক্তির পেছনে থাকা লোকজনকে নড়াচড়া কিংবা চোখের পলক ফেলতে দেখা যায়নি এবং উক্ত ব্যক্তির মুখ নড়লেও চোখের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটিতে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ দেখা যায়। veo টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৯ শতাংশ।
‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ’
গত জুলাইয়ে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ’ স্লোগানের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলনের ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে এআই সংক্রান্ত কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটিতে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ দেখা যায়। veo টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
দুই বাসের বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চাপা পড়ার দৃশ্য
গত জুলাইয়ে দুই বাসের বেপরোয়া ওভারটেকিংয়ে মোটরসাইকেল চাপা পড়ার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি। এতে একটি সিএনজিকে অস্বাভাবিকভাবে উল্টো দিকে চলতে দেখা যায় এবং দুইটি বাসের মধ্যে একটি বাসের উভয় দিকেই ফ্রন্টভিউ দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের দিকে ‘MINIMAX | Hailuo AI’ লেখা জলছাপও দেখা যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Hailuo Ai’ মিনিম্যাক্স নামের একটি চাইনিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৬ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এছাড়া এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ভিডিওটি এআই দ্বারা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৩ শতাংশ।
পটুয়াখালী পায়রা গঞ্জ নদীতে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা
গত জুলাইয়ে ‘পটুয়াখালী পায়রা গঞ্জ নদীতে পড়ে গেছে যাত্রীসহ বাস!’ ক্যাপশনে বাস দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, পটুয়াখালীতে ‘পায়রা গঞ্জ’ নামে কোনো নদী বা স্থান নেই। Cozyclouds1 নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৯ জুন প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে ক্যাপশনে এটিকে খরস্রোতা নদীতে পড়ে বাস দুর্ঘটনার ভিডিও বলে উল্লেখ করা হয়৷ ভিডিওটিতে ‘AI Info’ লেবেল যুক্ত করা আছে, অর্থাত ভিডিওটির পোস্টদাতা নিজেই এটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি বলে চিহ্নিত করেছেন। Cozyclouds1 নামের ফেসবুক পেজটির ডেসক্রিপশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় নির্মিত কন্টেন্ট প্রচার করে।
২০০ বছর বয়সী মানুষের ভিডিও
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, ভিডিওর ব্যক্তির বয়স ২০০ বছর। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। এআই কন্টে ন্নটে টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।
আপনার মতামত দিন
এই পোস্টটি কি আপনার জন্য সহায়ক ছিল?
আপনার মতামত শেয়ার করুন:
বিশ্লেষণ
ইন্টারনেটে এআই কন্টেন্ট: নিশানায় সরকার,
রাজনৈতিক দল ও বাহিনী
}২৭ অক্টোবর ২০২৫
প্রপাগান্ডাকারীদের কাছে এআই প্রযুক্তি এক নতুন হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন চটকদার ও রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত বিষয়ক কন্টেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষত, বিশ্বব্যাপী দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের আগে, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়, বা জরুরি পরিস্থিতিতে এই ধরনের কন্টেন্ট জনমতকে প্রভাবিত এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকে ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি ও মানহানির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এআই প্রযুক্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লৈঙ্গিক অসংবেদনশীল কন্টেন্টও ছড়ানো হচ্ছে এআই প্রযুক্তি দিয়ে।
এআই-সৃষ্ট ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তু ও রাজনৈতিক ঝোঁক নির্ণয় করা এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিসরে এআই-নির্ভর প্রপাগান্ডার ধরন ও ঝুঁকি অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট-চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট ২০২৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তিন মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এআই কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দল, সরকার এবং বাহিনী (পুলিশ ও সেনাবাহিনী) নিয়ে বেশি এআই-সৃষ্ট অপতথ্য ছড়াচ্ছে। রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে আওয়ামীলীগকে নিয়ে; তবে ছড়িয়ে পড়া এসব অপতথ্যসমূহ দলটির পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা, অন্যদিকে আওয়ামীলীগ ব্যতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সরকার নিয়ে ছড়িয় পড়া অপতথ্যসমূহের ধরন নেতিবাচক।
এই গবেষণার জন্য মোট ৭১টি ছবি/ভিডিও এবং এর কন্টেন্টকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। [নমুনা বাছাইয়ের পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে] প্রতিটি ভিডিও পৃথক বিশ্লেষণ একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ভিডিওগুলো বিষয়ভিত্তিকভাবে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে: আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সেনাবাহিনী/পুলিশ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, দুর্ঘটনা, ধর্মীয়, লৈঙ্গিক-অসংবেদনশীলতা, ডাকসু ও অন্যান্য। এই ক্যাটাগরিগুলো মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ নয়। একটি ভিডিওতে একাধিক ক্যাটাগরির উপস্থিতি ছিল। বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নমুনা ভিডিওসংখ্যা (N=71) ভিত্তি ধরে শতকরা হার নির্ণয় করা হয়েছে।
প্ল্যাটফর্ম ও মাধ্যম
শনাক্তকৃত এআই-সৃষ্ট অপতথ্যসমূহ ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার) এবং থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছিল। একাধিক কন্টেন্ট একের অধিক প্ল্যাটফর্মে পাওয়া গেছে। এটা অপতথ্যগুলোর প্রচারের বহুমাত্রিক ও সমন্বিত বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে ফেসবুকে, সেখানে মোট ৬১টি কনটেন্ট (প্রায় ৮৬%) শনাক্ত করা হয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে টিকটক, যেখানে ৪০টি কনটেন্ট (প্রায় ৫৬%) পাওয়া গেছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স এবং থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে তুলনামূলকভ কম উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সারণি ১ : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক এআই-সৃষ্ট অপতথ্যের উপস্থিতি
কন্টেন্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিথ্যা বা প্রপাগান্ডামূলক বার্তা প্রচারে ভিডিও ফরম্যাট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। মোট ৭১টি কন্টেন্টের মধ্যে ৫৭টি ছিল ভিডিও-কেন্দ্রিক এবং ১৪টি ছিল ছবি-কেন্দ্রিক।
কন্টেন্টের বিষয়বস্তু ও বিশ্লেষণ
এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত মোট ৭১টি কন্টেন্টের বিশ্লেষণে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। পরিসংখ্যানগত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩৫টি কন্টেন্ট ছিল রাজনৈতিক দল নিয়ে। অর্থাৎ, প্রায় ৪৯ শতাংশ ভিডিওতে রাজনৈতিক দল বিষয়ক কন্টেন্টের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এরপরেই রয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিয়ে। প্রায় ৩১ শতাংশ কন্টেন্ট ছিল পুলিশ ও সেনাবাহিনী সম্পর্কিত। ১৭ শতাংশ কন্টেন্টে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রসঙ্গে ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানের নেতাদের সম্পর্কিত বিষয় পাওয়া যায় প্রায় ১১ শতাংশ ভিডিওতে। বিভিন্ন দুর্ঘটনার সময় এআই সৃষ্ট কন্টেন্টের ছড়িয়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পায়। গবেষণার জন্য নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনা ছিল অন্যতম। প্রায় ১০ শতাংশ এআই সৃষ্ট কন্টেন্টে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার বিষয় লক্ষ্য করা যায়। নমুনাগুলোর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ কন্টেন্ট ছিল লৈঙ্গিক অসংবেদনশীল।
সারণি ২ : গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত কন্টেন্টের বিষয়ভিত্তিক প্রবণতা
নমুনাগুলোর ৪৯ শতাংশ ভিডিওতে রাজনৈতিক দল সম্পর্কিত কন্টেন্ট পাওয়া গেলেও, সবগুলোই ছিল চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৬৮ শতাংশ ছিল আওয়ামীলীগকে কেন্দ্র করে, ১৭ শতাংশ বিএনপি, ৯ শতাংশ জামায়াত এবং ৬ শতাংশ এনসিপিকে নিয়ে, যদিও এই কন্টেন্টসমূহের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিয়ে যা প্রচারিত হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই দলটির পক্ষের। অর্থাৎ, আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত কন্টেন্টগুলো দিয়ে দলটির ভূমিকা ও ভাবমূর্তিকে ইতিবাচক করে দেখানোর প্রবণতা ছিল।
তবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ নিয়ে কেবল নেতিবাচক প্রচারণাই ছিল। অর্থাৎ, এআই-সৃষ্ট অপতথ্যগুলো দিয়ে আওয়ামীলীগের পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা করতে দেখা যায়, বিপরীতে বাকি দলগুলো নিয়ে কেবল নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
যেমন, গত আগস্টে এক ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল যেখানে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পরিহিত কিছু শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের মধ্যে সামনের জন একটি প্লেকার্ডটি ধরে আছেন। প্লেকার্ডে লেখা - ‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’। কিন্তু এটি বাস্তব কোনো ছবি নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ছবি তৈরি করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত কন্টেন্টগুলো বিশ্লেষণ করা দেখা যায় যে, আওয়ামীলীগ ব্যতীত সবাইকে নিয়েই নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে যেসব এআই-সৃষ্ট অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, সেখানে বাহিনী বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে জড়িয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সম্পর্কিত প্রচারণা দেখা গিয়েছে। যেমন, গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের স্লোগানের ভিডিও। তবে ভিডিওটি ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
একইরকম নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা গিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এর প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের নিয়ে। আলোচিত নমুনাসমূহের মধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকার সম্পর্কিত যে ১২ টি (প্রায় ১৭ শতাংশ) কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে, তার সবগুলোই নেতিবাচক। যেমন, গত জুলাইয়ে, ‘সরকারের আসল চেহারা ফাঁস’ শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে একজন বৃদ্ধকে বলতে শোনা যায়, “ইউনূস সরকারকে সরাও, দেশ বাঁচাও। এই সরকার গরিবদের জন্য আর কোনো উন্নয়ন করছে না, কোনো সংস্কার করছে না।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
একইভাবে, গত আগস্টে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সংসদে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। সেখানে এক নারী বক্তাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায়। কিন্তু এই ভিডিওটিও ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি।
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, অর্থ উপদেষ্টা সরকারি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মে অর্থ বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন এবং প্রতি সপ্তাহে মোটা অঙ্কের আয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এই ভিডিওটিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিকৃতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল।
নমুনাসমূহের মধ্যে ৮টি কন্টেন্টে (প্রায় ১১ শতাংশ) জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত বিষয়বস্তু পাওয়া যায়। এই কন্টেন্টসমূহের প্রায় সবগুলোতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ঘিরে নেতিবাচক প্রচারণার প্রবণতা খেয়াল করা যায়। কেননা, ৮টি কন্টেন্টের সবগুলোই ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নেতিবাচক বিষয়বস্তু। যেমন, গত আগস্ট মাসে একটি ভিডিওতে ছড়িয়ে পড়ে যে, আইজিপি বাহারুল আলম ৫ আগস্টকে পুলিশ হত্যা দিবস উল্লেখ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু, এই ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একজন বয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। যেখানে সাংবাদিক তাঁর কাছে ৫ আগস্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ‘অবুঝ ছাত্ররা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে দেশ ধ্বংস করেছে’ বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু এই ভিডিওটিও ছিল এআই-সৃষ্ট।
যে কোনো জাতীয় দুর্ঘটনার সময় অপতথ্য বৃদ্ধি পায়। মাইলস্টোন ট্রাজেডির সময় অনেকগুলো এআই সৃষ্ট কন্টেন্ট ছড়িয়ে পড়েছিল নেটদুনিয়াতে। যেমন, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেই বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য দাবি করে একটি এআই-সৃষ্ট ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
প্রাপ্ত নমুনাসমূহের মধ্যে লৈঙ্গিক অসংবেদনশীল বিষয় পাওয়া যায় প্রায় ১০ শতাংশ কন্টেন্টে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো উপদেষ্টাকে জড়িয়ে এআই-সৃষ্ট অপতথ্য ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। নারী রাজনীতিবিদদের বিশেষভাবে এর লক্ষ্যবস্তু হতে দেখা যায়। যেমন, গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে হোটেল কক্ষে এক তরুণীর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আদতে এই ছবিটি ছিল এআই-সৃষ্ট।
একইভাবে গত জুলাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারার হাফপ্যান্ট পরিহিত একটি ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। কিন্তু এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ফুল প্যান্ট পরা একটি ছবি সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমার ব্যক্তিগত ছবি দাবিতে দুইটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। কিন্তু্ দেখা যায়, ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন দুই নারীর ছবি সংগ্রহ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে জুমার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ধর্মীয় ও অন্যান্য বিভিন্ন ইস্যুতে এআই-সৃষ্ট কন্টেন্ট ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তবে, এই গবেষণার জন্য নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে এটা খুব অল্প ছিল।
উপসংহার
এই গবেষণা থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, বর্তমানে রাজনৈতিক দল নিয়ে এআই-সৃষ্ট অপতথ্য বেশি ছড়াচ্ছে। ২০২৫ সালের তিনমাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, পুলিশ/সেনাবাহিনীকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া এআই-সৃষ্ট অপতথ্যগুলো সম্পূর্ণ নেতিবাচক। ইতিবাচক প্রচারণা হচ্ছে কেবল কেবল আওয়ামীলীগকে নিয়ে। এআই-সৃষ্ট প্রায় সকল অপতথ্য ও প্রচারণা আওয়ামী লীগের দিকে পক্ষপাতপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
পাশপাশি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়েও নেতিবাচক প্রচারণা খেয়াল করা যাচ্ছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত যত কন্টেন্ট পাওয়া যাচ্ছে, সবগুলোতেই অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানকারীদের অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রবণতা দেখা যায়।
গবেষণার পদ্ধতি
এই বিশ্লেষণের জন্য মোট ৭১টি এআই-সৃষ্ট কন্টেন্টকে নমুনা [স্যাম্পল] হিসেবে নেওয়া হয়েছে। নমুনাগুলো পার্পাসিভ স্যামপ্লিং পদ্ধতিতে বাছাই করা হয়েছে। অর্থাৎ, সামাজিক মাধ্যমে রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম বলে প্রতীয়মান হয়েছে এমন ভিডিও নেওয়া হয়েছে। বাছাই করার জন্য প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠানের আলোচিত তিন মাসে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকগুলো নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড সার্চ করে উল্লিখিত তিনমাসে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এআই-সৃষ্ট ভিডিও নেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স প্ল্যাটফর্ম থেকে কন্টেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রায়শই একই কন্টেন্ট একাধিক প্ল্যাটফর্মে পাওয়া গিয়েছে। একই কন্টেন্টের ফ্যাক্ট চেক একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান করেছেন। নমুনাগুলোকে যাচাইয়ের জন্য যে টুলসগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে : ডিপফেক-ও-মিটার, হাইভ মডারেশন, সাইটইঞ্জিন, ক্যান্টিলাক্স, রেসেম্বল এআই ডিটেক্ট সহ অন্যান্য।
গবেষণার সীমাবদ্ধতা
এই গবেষণার প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো এর সময়কাল-ভিত্তিক স্বল্পতা, যেখানে মাত্র তিন মাসের ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর ফলে এআই-সৃষ্ট কন্টেন্টের দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা ও বিবর্তন সম্পূর্ণভাবে বাদ পড়েছে। এছাড়াও, ডেটা সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা ছিল যে সকল এআই-সৃষ্ট ভিডিওর লিঙ্ক কাজ করছিল না বা যা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল (যেমন, প্ল্যাটফর্মের নীতি লঙ্ঘনের কারণে), সেগুলিকে গবেষণা থেকে বাদ দিতে হয়েছে। এর ফলে নমুনা সম্পূর্ণতা বজায় থাকেনি এবং বাদ পড়া কন্টেন্টগুলির প্রকৃতি হয়তো সামগ্রিক প্রবণতার চিত্রকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে।
****
এআই-সৃষ্ট যে অপতথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে
ইউনূসকে সরিয়ে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়ে ভারতের সংসদে বক্তব্য
গত আগস্টে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সংসদে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। সেখানে এক নারী বক্তাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায়। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। ভিডিওতে ‘JPT NEWS’ লেখা একটি লোগো দেখা যায়, যার সূত্র ধরে ‘JPT Bangla News’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে এআই উপাদান পাওয়া যায়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৬৮ শতাংশ।
‘ইউনূস সরকার লুটেরা’ বলে ভারতের সংসদে সমালোচনা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লুটেরা বলে ভারতের সংসদে এক বক্তা সমালোচনা করছেন দাবি করে গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়ানো হয়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে এআইজনিত বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল হাইভ মডারেশনে যাচাই করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯২ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
ড. ইউনূস ১৫ আগস্টে শোক দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করে হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৫ই আগস্টে শোক পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে দাবিটি সঠিক নয়, ভিডিওটি এক বছর পূর্বের। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এর অডিওর সাথে ড. ইউনূসের মুখভঙ্গির অমিল পাওয়া যায়। আসলে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের একটি ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ভুয়া অডিও যুক্ত করে এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ আটটি জাতীয় দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছরের ১৬ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বৃদ্ধের 'ইউনূস সরকারকে সরাও, দেশ বাঁচাও' স্লোগান
গত জুলাইয়ে, ‘সরকারের আসল চেহারা ফাঁস’ শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে একজন বৃদ্ধকে বলতে শোনা যায়, “ইউনূস সরকারকে সরাও, দেশ বাঁচাও। এই সরকার গরিবদের জন্য আর কোনো উন্নয়ন করছে না, কোনো সংস্কার করছে না।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্লেষণে ভিডিওর ভয়েস, পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এআইজনিত অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯১ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
জনতার ইউনূস বিরোধী বিশাল মিছিল
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে জনতার মিছিলের দৃশ্য। ভিডিওটিতে জনতাকে ‘হইহই রইরই, ইউনূসের বাচ্চারা হুঁশিয়ার সাবধান, রাজাকারের বাচ্চারা হুঁশিয়ার সাবধান, দালালের বাচ্চারা হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মুখভঙ্গি ও উচ্চারিত স্লোগানের মধ্যে অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল হাইভ মডারেশনের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশেরও বেশি।
ড. ইউনূস নতুন বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মে অর্থ বিনিয়োগ করতে বলেছেন
গত জুলাইয়ে “A new project for the citizens of Bangladesh” শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দাবি করা হয়, সরকার একটি বিনিয়োগ প্লাটফর্ম চালু করেছে যেখানে একজন নাগরিক প্রতি সপ্তাহে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আয় করতে পারবে। মাত্র ৩০৫০০ টাকা বিনিয়োগ করলেই সপ্তাহে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আয় করার নিশ্চয়তা রয়েছে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। তবে দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, আল জাজিরাকে দেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিওকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। মূল ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এমন বিনিয়োগ উদ্যোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কন্ঠস্বর, ঠোঁটের অস্বাভাবিক নড়াচড়া দেখা যায়, যা মূল সাক্ষাৎকারে দেখা যায়নি। ভিডিওটির ভয়েস এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৮ শতাংশ। পাশাপাশি, ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটককৃতদের এনসিপির নেতা এবং আমাদের সন্তান বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য প্রদান
গত জুনে গুলশানের একটি বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা সহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “গুলশানে যে ধরা পড়েছে, সে আমাদের এনসিপির নেতা। আমি বকে দিয়েছি, বলেছে আর করবে না। চাঁদাবাজ হোক বা যা-ই হোক, ওরা তো আমাদেরই সন্তান।” তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওতে গুগলের ‘Veo’ এআই টুলের জলছাপ এবং অসঙ্গতিপূর্ণ ইংরেজি লেখা শনাক্ত হয়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সের বিশ্লেষণে ভিডিওটি ৮২ শতাংশ এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনায় ফলাফল পাওয়া যায়।
হোটেল রুমে তরুণীর সঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এতে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে হোটেল কক্ষে এক তরুণীর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ছবি। ছবিটিতে হোটেল রুমের দৃশ্য অস্বাভাবিকভাবে নিখুঁত, মুখে প্রাকৃতিক দাগ বা সূক্ষ্ম ভাঁজ অনুপস্থিত এবং তরুণীর গালে হাত রাখার ভঙ্গিটিও অপ্রাকৃতিক, যা এআই-তৈরি কন্টেন্টের বৈশিষ্ট্য। যাচাইয়ে আরও জানা গেছে, আসিফ মাহমুদের একটি ছবি এবং ওই নারীর আরেকটি আলাদা ছবি ব্যবহার করে প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী হাইভ মডারেশন টুলের বিশ্লেষণে ছবিটি ৯৯ শতাংশ এআই-তৈরি বলে জানা যায়।
তরুণীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
গত সেপ্টেম্বরে এক তরুণীর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ছবি দাবি করে দুইটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে ছবিগুলো বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে। ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে এতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। প্রচারিত ছবিগুলোর ডানপাশের নিচে গুগলের এআই টুল জেমিনির লোগোর জলছাপ দেখতে পাওয়া যায়। ছবিগুলো এআই ও ডিপফেক কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ যাচাই করলে এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে দেখা যায়।
অর্থ উপদেষ্টা সরকারি বিনিয়োগ প্লাটফর্মে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, অর্থ উপদেষ্টা সরকারি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মে অর্থ বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন এবং প্রতি সপ্তাহে মোটা অঙ্কের আয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তবে দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ভিডিওকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিকৃত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে সালেহউদ্দিন আহমেদের উচ্চারণে কৃত্রিমতা পরিলক্ষিত হলে তাঁর একাধিক ভিডিও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এই ভিডিওর সাথে তাঁর কথা বলার ধরণের পার্থক্য রয়েছে। আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকারী ওয়েবসাইট Resemble AI এ অডিও ক্লিপটি যাচাই করলে অডিওটিকে ‘Fake’ বলে চিহ্নিত করা হয়। আরেক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকারী ওয়েবসাইট হাইভ মডারেশনে এ যাচাই করে ভিডিও ক্লিপটিকে আসল বলা হলেও অডিও ক্লিপটিকে প্রায় ১০০ শতাংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তা তৈরি বলে চিহ্নিত করা হয়।
৫ই আগস্ট পুলিশ হত্যা দিবসে পুলিশ হত্যার বিচার হবে বলে সেনাপ্রধানের বক্তব্য
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৫ আগস্টকে পুলিশ হত্যা দিবস উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ভিডিওটি বাস্তব নয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। তাছাড়া, সেনাপ্রধান এমন বক্তব্য দিলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো। গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে তাঁর এমন বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভিডিওটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৪ শতাংশ।
জনতার সেনাপ্রধান বিরোধী স্লোগান
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের স্লোগানের ভিডিও। তবে ভিডিওটি বাস্তব কোনো দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর অডিও ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা লেখা থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
এক সেনাসদস্য পুলিশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে বক্তব্য রাখছেন
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, একজন সেনা সদস্য বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন। ভিডিওতে ওই ব্যক্তি বলতে শোনা যায়, “পুলিশ যদি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করে, তবে দেশকে শোধরানো অসম্ভব। পুলিশ চাইলে তিন দিনে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারে, কারণ দুর্নীতিবাজরা পুলিশের আশ্রয় নেয়। সেনাবাহিনী ফিরে যাবে, কিন্তু দেশের মানুষকে পুলিশকেই সামলাতে হবে।” তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। এতে পুলিশ সদস্যের কণ্ঠস্বর, মুখের অভিব্যক্তি, শারীরিক গঠন এবং ঠোঁটের অস্বাভাবিক নড়াচড়ায় এআই-তৈরি কন্টেন্টের বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। এছাড়া, ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলের বিশ্লেষণেও ভিডিওটি ৯৯ শতাংশ এআই-তৈরি বলে জানা যায়।
শেখ হাসিনাকে নতুন সেনাপ্রধানের কঠোর হুশিয়ারি
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, নতুন সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। ভিডিওটিতে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “যিনি মোদির কোলে বসে বলেন টুপ করে দেশে ঢুকবেন। আপনি আসেন, পিলখানা, শাপলা, জুলাইয়ের হিসেব পই পই করে হবে। We stand United to defend our nation’s sovereignty, prepared for any challenge that may arise”। ভিডিওটিতে ৮ সেকেন্ড পর ভিন্ন ফ্রেমে অপর এক ব্যক্তিকে কথা বলতে শোনা যায়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভিডিওর ব্যক্তি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নন। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর কণ্ঠস্বর, সেনাবাহিনীর পোশাক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা লেখা থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্য ১৬ সেকেন্ড এবং ৮ সেকেন্ড পর ফ্রেম পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
সিলেটে পাথর চুরি প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলের সমালোচনা সেনা সদস্যের
গত আগস্টে সিলেটে আলোচিত সাদা পাথর চুরি প্রসঙ্গে সেনা সদস্যদেরর বক্তব্য দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। সেখানে তারা পাথর চুরি প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় আসলে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি বানোয়াট ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে সেখানকার কণ্ঠস্বর সহ এআইজনিত বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। বিষয়টি নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলের সাহা্য্যে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই-নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা ৮১ শতাংশ।
“চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পুলিশের, আমাদের নয়” বলেছেন সেনা সদস্য
চলতি বছরের আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে এক সেনা সদস্যের সঙ্গে সাংবাদিকের কথোপকথনের দৃশ্য এটি। ভিডিওটিতে এক সাংবাদিক সেনা সদস্যকে প্রশ্ন করেন, “আপনারা থাকতে দেশে এতো চাঁদাবাজি হচ্ছে! ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?” প্রত্যুত্তরে সেনা কর্মকর্তা বলেন, “চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পুলিশের, আমাদের নয়।” তবে এই ভিডিওটি বাস্তব নয়, আদতে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। বিশ্লেষণে ভিডিওটিতে এআইজনিত বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। তাছাড়া, ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
গাজীপুরে সামরিক যানে মিসাইল বহন
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি ঢাকার গাজীপুরে সামরিক যানে মিসাইল বহনের দৃশ্য। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত এই ভিডিওর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘MINIMAX | Hailuo Ai’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Hailuo Ai’ মিনিম্যাক্স নামের একটি চাইনিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৬ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৬ সেকেন্ড। এছাড়া, ভিডিওটিতে গাড়ির নাম্বার প্লেটে অসঙ্গতিসহ রাস্তার আশেপাশে বেশিরভাগ সাইনবোর্ডে GAZIPUR শব্দ লেখা দেখা যায়, যা অস্বাভাবিক। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্ সাহায্যে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
‘৫ই আগস্ট অভ্যুত্থান দিবস হতে পারে না, একদিনে ৩২০০ পুলিশ সদস্যকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে’ বলে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য
গত ৫ আগস্ট ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়ানো হয়, যেখানে পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি একজন সাংবাদিককে বলছেন, “আজ ৫ই আগস্ট অভ্যুত্থান দিবস হতে পারে না। আজ একদিনে ৩২০০ পুলিশ সদস্যকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। তাই, আজ পুলিশ হত্যা দিবস।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কণ্ঠস্বর সহ আইজনিত একাধিক অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ মূলত গুগলের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা লেখা থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
৫ই আগস্ট পুলিশ হত্যা দিবসে বিচারের আশ্বাস দিয়ে আইজিপির বক্তব্য
গত ৫ আগস্ট ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, আইজিপি বাহারুল আলম ৫ আগস্টকে পুলিশ হত্যা দিবস উল্লেখ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, পুলিশ প্রধান এমন বক্তব্য দিলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো। গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে তাঁর এমন বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্সে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৪ শতাংশ।
পুলিশের সামনে আসামীর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে হাতকড়া পরানো এক আসামীর মাথায় পেছন থেকে এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শিক্ষার্থী হত্যার মামলার আসামি জুনেলকে আদালতে হাজির করার একটি ছবিকে বিকৃত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সমকাল এর ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে ভিডিওর আসামি ও পুলিশ সদস্যদের ছবিটি পাওয়া যায়। দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর দৃশ্য এবং গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবি একই স্থানের। বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘MINIMAX | Hailuo Ai’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Hailuo Ai’ মিনিম্যাক্স নামের একটি চাইনিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৬ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৬ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্সে ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ।
গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় সেনাপ্রধানকে দায়ী করে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে দোষারোপ করে বাংলাদেশ পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করেছে বলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কথিত এই সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্লেষণে ভিডিওতে এআই-জনিত কিছু অসঙ্গতি পাওয়া। যেমন – পুলিশের পোশাক, কণ্ঠস্বর, বুমে অজ্ঞাত গণমাধ্যমের লোগো। পাশাপশি ভিডিওটির নিচের ডান কোণে গুগলের জেনারেটিভ টুল ‘Veo’র লোগো দেখা যায়, veo টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির প্রত্যেকটি অংশের দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
এক পুলিশ সদস্য আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করে বিএনপির সমালোচনা করছেন
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয়, এক পুলিশ সদস্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তুলনা করে বিএনপির সমালোচনা করছেন। তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। কোনো গণমাধ্যমে এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তার মন্তব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ভিডিওটির কণ্ঠস্বর, মুখভঙ্গি এবং অন্যান্য উপাদানে এআই-এর বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এর সংবাদ সম্মেলনের পেছনের বাংলা লেখা বিকৃতভাবে দেখা যায়, যা সাধারণত এআই-তৈরি কন্টেন্টে প্রায়শই দেখা যায়। এআই টুলগুলোর বাংলা ভাষায় সীমিত দক্ষতার কারণে এ ধরনের ত্রুটি ঘটে। এছাড়া, ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলের বিশ্লেষণেও ভিডিওটি ৯৯ শতাংশ এআই-তৈরি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখ কিনা তা নিয়ে পুলিশ সদস্যের সন্দেহ
গত আগস্টে ইন্টারনেটে ছড়ানো একটি ভিডিওতে এক পুলিশ সদস্যকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ কিনা তা নিয়ে তাকে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তবে পুলিশ সদস্যের বক্তব্যের ভিডিওটি আসল নয় আদতে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৬.৯ শতাংশ।
‘প্রবাসীদের সাথে চাঁদাবাজি হয়’ বলে পুলিশের বক্তব্য
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো একটি ভিডিওর শুরুর ৮ সেকেন্ড সময়ে এক পুলিশ সদস্যকে বলতে দেখা যায়, “ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, নেপাল থেকে প্রবাসে আসতে খরচ হয় ১ লক্ষ টাকা। আর আমাদের বারো আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ থেকে প্রবাসীদের আসতে খরচ হয় ৫ লক্ষ টাকা।”
পরের ৯ সেকেন্ড সময় হতে ভিন্ন আরেক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, “চাঁদাবাজি শুধু রাস্তায় হয়না, প্রত্যেকটা প্রবাসীর সাথে হয়। এ দালালদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে। প্রত্যেকটা প্রবাসীর পক্ষ থেকে আমার এই দাবি।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় আসলে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি বানোয়াট ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে পুলিশ সদস্যদের কণ্ঠস্বর এবং মুখভঙ্গিতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।
সরকারকে ‘চোর’ ও জনগণকে ‘ডাকাত’ অভিহিত করে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এক পুলিশ কর্মকর্তা একটি আলোচনা সভায় জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সমালোচনা করে সরকারকে চোর ও জনগণকে ডাকাত বলে অভিহিত করেছেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়, আসলে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি বানোয়াট ভিডিও। ভিডিওটির মূল সংস্করণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রচারকারী ভিডিওটিকে এআই জেনারেটেড কন্টেন্ট বলে লেভেল করেছেন। অর্থাৎ, এটি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি তা এতে স্পষ্ট।
‘বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই আওয়ামী লীগের ১৭ বছরকেও হার মানাচ্ছে’ বলেছেন পুলিশ সদস্য
গত আগস্টে “বিএনপিকে বাঁশ দিলো পুলিশ অফিসার” শিরোনামে পুলিশ সদস্যের বক্তব্য বলে দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। ভিডিওটিতে এক পুলিশ সদস্য বলছেন, “চাকরি চলে যেতে পারে তবুও বলি, একটা দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগে যা শুরু করেছে তা আওয়ামী লীগের ১৭ বছরকেও হার মানাচ্ছে। ভোট না দিলে তারা নাকি মানুষকে জান নিয়ে ঘরে ফিরতে দিবে না। এদেরকে জাহেল বললেও কম হবে।” তবে ভিডিওটি আসল নয়, আদতে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। এটি পর্যবেক্ষণ করে এতে একাধিক এআইজনিত অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৩ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
পাথর লুটপাটকারীদের পুলিশের আটক করার ছবি
গত আগস্টে পাথরসহ পুলিশের সাথে কয়েকজন ব্যক্তির একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, পুলিশ পাথরসহ এদেরকে আটক করেছে। তবে ছবিটি বাস্তব নয়, আসলে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ছবি। ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে এতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ছবিটির ডান পাশের নিচের অংশে ‘ai’ লেখা সম্বলিত জলছাপ দেখতে পাওয়া যায়। গুগলের এআই টুল ব্যবহার করে কোনো ছবি তৈরি করলে সেখানে এমন জলছাপ দেখা যায়।
‘দেশটা আপনার বাপের সম্পত্তি না, লুটপাট বন্ধ করেন’ বলেছেন র্যাব সদস্য
গত জুলাইয়ে, “দেশটা আপনার বাপের সম্পত্তি না, এইটা আমাদের সবার। লুটপাট বন্ধ করেন ভাই, দিন শেষ হইছে। চেয়ারটা সাময়িক ভাই, কিন্তু বদনামটা চিরস্থায়ী। কিছু তো লজ্জা করেন!” শিরোনামে র্যাব সদস্যের বক্তব্য দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। বিশ্লেষণে ভিডিওটি বাস্তব বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওতে র্যাব সদস্যের পেছনের মানুষগুলোর অস্বাভাবিক নড়াচড়া সহ এআইজনিত অন্যান্য অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
‘ধানের শীষে ভোট দিন, নিজের লাশ বুঝে নিন। যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন’
গত জুলাইয়ে বিএনপিকে নিয়ে এক ব্যক্তি জনসভায় “ধানের শীষে ভোট দিন, নিজের লাশ বুঝে নিন। যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন।” বলে বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়েছে। তবে ভিডিওটি আসল নয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বক্তব্য দেয়া ব্যক্তিকে বক্তব্যের সময় চোখের পলক ফেলতে দেখা যায়নি যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ দেখা যায়। ‘Veo’ হলো গুগলের একটি অত্যাধুনিক এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই টুল দিয়ে তৈরি ভিডিওতে সাধারণত ‘Veo’ জলছাপ থাকে। এই ভিডিওটিতেও ‘Veo’ জলছাপ রয়েছে এবং এর দৈর্ঘ্য ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
সাধারণ জনগণ বলছেন- ‘বিএনপির গুণ, নয় মাসে দেড়শ খুন
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে এক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণের বক্তব্য শুনুন বাস্তব ও সত্য কথা।” ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তির “চাচা, বিএনপির গুণ কী কী” প্রশ্নের জবাবে অপর এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “বিএনপির অনেক গুণ, নয় মাসে দেড়শ খুন৷ চাঁদা তুলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটিতে ‘AI Manob’ লেখা জলছাপ পাওয়া যায়। এই নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে গত ০১ জুলাই একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে সেখানে বিভিন্ন সময়ে এআই দিয়ে তৈরি একাধিক ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “ক্যান্টিলাক্স” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। এছাড়াও, এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম “হাইভ মডারেশন” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৭ শতাংশ।
রুমিন ফারহানা ও ড. জাহেদের অন্তরঙ্গ ছবি
গত সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান ও বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানার আলিঙ্গনরত কথিত একটি ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, রুমিন ফারহানা ও জাহেদ উর রহমানের পৃথক দুটি ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, আলোচিত ছবিটি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, এর নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের জলছাপ দেখা যায়। জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট গুগল ডিপমাইন্ড ‘ন্যানো বানানা’ নামে একটি উন্নত ইমেজ এডিটিং মডেল উন্মোচন করেছে, যা বর্তমানে গুগলের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট জেমিনির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এই মডেল ব্যবহারকারীদের উন্নত ও সৃজনশীলভাবে ছবি সম্পাদনার সুযোগ প্রদান করে। এর একটি বিশেষ ফিচার হলো ‘ব্লেন্ড ফটোস টুগেদার’, যার মাধ্যমে পৃথকভাবে তোলা একাধিক ছবি একত্রিত করে নতুন একটি দৃশ্য তৈরি করা সম্ভব।
কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর ফরিদকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে যমুনা টিভির নাম ও লোগো সম্বলিত একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, তারেক রহমানের নির্দেশে কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর ফরিদকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি ভিডিওকে যমুনা টিভির বাস্তব সংবাদ প্রতিবেদন বলে প্রচার করা হয়েছে। যমুনা টিভির ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে কথিত এই সংবাদ প্রতিবেদনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে উপস্থাপকের অঙ্গভঙ্গি, কথা বলার ধরণ ও সংবাদ উপস্থাপনার ধরণে অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে যমুনা টিভির শিফট ইনচার্জ মিশুক নাজিবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৮ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে তিনি বলেন, “যমুনা টেলিভিশনের লোগো ব্যবহার, প্রেজেন্টারের ছবি ভার্চুয়ালি উপস্থাপন এবং Tarique Rahman এর নাম ব্যবহার করে বিএনপি নেতা আলমগীর ফরিদ কক্সবাজার-২ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন দাবি করে যে ভিডিওটি ছড়ানো হচ্ছে তা এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি। ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান থাকলেই বুঝা যাবে, এআই কন্টেন্টটি যে ভুয়া।”
‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’ লেখা প্লেকার্ড হাতে শিক্ষার্থীদের ছবি
এক শিক্ষার্থীর হাতে ‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’ লেখা যুক্ত প্লেকার্ডের একটি ছবি গত আগস্টে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পরিহিত কিছু শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের মধ্যে সামনের জন প্লেকার্ডটি ধরে আছেন। তবে এটি বাস্তব কোনো ছবি নয়। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি বিশ্লেষণে এতে একাধিক অসঙ্গতি পাওয়া যায়। আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বিশাল মিছিল
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মিছিলের ভিডিও এটি। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তার ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে কিছু অসঙ্গতি দেখা যায়। আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্সে ভিডিওটি যাচাই করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ বলে জানা যায়। তাছাড়া, আরেক এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Resemble AI এ ভিডিওটির অডিও ক্লিপটি যাচাই করলে এটিকে ‘Fake’ বলে চিহ্নিত করা হয়।
দেয়ালে শিক্ষার্থীদের শেখ হাসিনার গ্রাফিতি অঙ্কন
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, শিক্ষার্থীরা দেয়ালে শেখ হাসিনার গ্রাফিতি অঙ্কন করেছে। তবে ছবিগুলো বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ভুয়া ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
ছবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ছবিগুলোর পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে খানিকটা অস্বাভাবিকতা রয়েছে যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি ছবিতে পরিলক্ষিত হয়। একটি ছবিতে এক শিক্ষার্থীর আঙুলের গড়নে অসঙ্গতি রয়েছে। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ক্যান্টিলাক্স এ ছবিগুলো পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৬ শতাংশ।
“আওয়ামী লীগ ফিরে আসলে আপনাদের কেয়ামত পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে”
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “আওয়ামী লীগ হয়তো একদিন এমনভাবে ফিরে আসতেছে তখন আপনাদের কেয়ামত পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এখনো সময় আছে ভাই জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করেন।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কথা বলা ব্যক্তির পেছনে থাকা ব্যক্তিকে নড়াচড়া কিংবা চোখের পলক ফেলতে দেখা যায়নি এবং বক্তব্য দেয়া ব্যক্তির মুখ নড়লেও চোখের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ হলো গুগলের একটি অত্যাধুনিক জেনারেটিভ এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই টুল দিয়ে তৈরি ভিডিওতে সাধারণত ‘Veo’ জলছাপ থাকে। এই ভিডিওটিতেও ‘Veo’ জলছাপ রয়েছে এবং এর দৈর্ঘ্য ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
“১৭ বছর মনে করেছিলাম আওয়ামী লীগ খারাপ, কিন্তু আমরাই ভুল করছিলাম আওয়ামী লীগকে তাড়াই দিয়ে”
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, একজন রিকশাওয়ালা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলছেন। রিকশাওয়ালাকে বলতে শোনা যায়, “১৭ বছর মনে করেছিলাম আওয়ামী লীগ খারাপ। কিন্তু এই এক বছরে যা দেখলাম, তাতে বুঝি গেলাম আসলে আওয়ামী লীগই ভালো ছিল। আমরাই ভুল করছিলাম আওয়ামী লীগকে তাড়াই দিয়ে।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সাহায্যে তৈরি। ভিডিওটিতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি দেখা যায়। ভিডিওটিতে গুগলের অত্যাধুনিক জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। পরবর্তীতে, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
‘আওয়ামী লীগ পরিচয় দিলেই মার খেতে হয়’
‘আওয়ামী লীগ পরিচয় দিলেই মার খেতে হয়’ বলে এক ব্যক্তি বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে একটি ভিডিও গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে বক্তব্যরত ব্যক্তিকে কথা বলার সময় চোখের পলক ফেলতে দেখা যায় নি এবং উক্ত ব্যক্তির মুখ নড়লেও চোখের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। এছাড়া, ভিডিওটিতে গুগলের অত্যাধুনিক জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। পরবর্তীতে, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
‘আওয়ামী লীগ দেশের উন্নতি করেছে, পালিয়ে না গেলে বুঝতাম না’ বলেছেন এক রিকশাওয়ালা
“রিক্সাওয়ালার মুখে দেশের উন্নয়নের কথা” শিরোনামে একটি ভিডিও গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। ভিডিওটিতে একজন নারী এক রিকশাওয়ালাকে প্রশ্ন করতে দেখা যায়, তিনি বলেন, “ভাই, আওয়ামী লীগ যত দুর্নীতি করেছে এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?” প্রশ্নের জবাবে একজন রিকশাওয়ালাকে বলতে শোনা যায়, “কে বলেছে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করেছে? আওয়ামী লীগ দেশের উন্নতি করেছে। এটা আওয়ামী লীগ পালিয়ে না গেলে আমরা বুঝতাম না।”
বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। এছাড়াও, ভিডিওটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “হাইভ মডারেশন” এ পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।
সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগকে আবার সরকারে চায়
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে “সাধারণ জনগণের কথা” শিরোনামে কয়েকজন ব্যক্তির স্লোগান দেওয়ার একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তির “তোমরা সবাই কী চাও?” প্রশ্নের জবাবে বাকিদের বলতে শোনা যায়, “আমরা চাই আওয়ামী লীগ আবার সরকারে ফিরুক। শান্তি চাই। উন্নয়ন চাই। আওয়ামী লীগ চাই।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “ক্যান্টিলাক্স” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।
নদীপথে নৌকার বিশাল মিছিল
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয়, এটি নদীপথে নৌকার মিছিলের দৃশ্য। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর বিভিন্ন উপাদানে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন ব্যক্তির নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা, তাদের নড়াচড়া সহ পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোতে অস্বাভাবিকতাদেখা যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ ‘আত্মীয়ভিত্তিক দল নয়’ বলে কর্মীদের উদ্দেশ্যে পুতুলের ভিডিওবার্তা
গত সেপ্টেম্বরে ‘শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল দল নিয়ে কথা বললেন, কর্মীদের কাছে থেকে নিতে চাইলেন পরামর্শ।’ ও ‘আমরা কর্মী ভিত্তিক দল গঠন করব আর আত্মীয় ভিত্তিক দল নয়।’ ক্যাপশনে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বক্তব্য হিসেবে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে বিশ্লেষণ প্রমাণ মিলেছে যে, ভিডিওটি বাস্তব নয়। আলোচিত ভিডিওটিতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের দাঁতের গঠনে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, যা স্বাভাবিক মানুষের দাঁতের গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আদতে পুতুলের ভিন্ন একটি ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ঢাকায় ‘শেখ হাসিনা বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ স্লোগানে আওয়ামী লীগের মিছিল
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিলের দৃশ্য। ভিডিওতে ‘শেখ হাসিনা বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে মিছিলে থাকা ব্যক্তিদের মুখের সাথে স্লোগানের অমিল এবং মুখাভঙ্গির অসঙ্গতি পাওয়া যায়। আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমেছে
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, জয় বাংলা স্লোগানে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে গিয়েছে। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। মিছিলে থাকা প্লেকার্ডের টেক্সটও অর্থপূর্ণ কোনো বাক্য বা শব্দের নয়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শিবলি সাদিককে জনগণ আবারও এমপি হিসেবে দেখতে চায়
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শিবলী সাদিককে সাধারণ মানুষ আবারও এমপি হিসেবে দেখতে চায়। ভিডিওটিতে বুম মাইক্রোফোন হাতে একজন রিপোর্টারকে বলতে শোনা যায়, “সাধারণ মানুষ দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক ভাইকে আবার এমপি হিসেবে চায়।” এরপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি বলেন, “হ্যাঁ, আমরা তাঁকেই চাই।” এরপর উপস্থিত দর্শকদের করতালি দিতে দেখা যায়। বিশ্লেষণে ভিডিওটি বাস্তব না হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটিতে সাংবাদিকের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের করতালি দেওয়ার সময় হাতের অস্বাভাবিক নড়াচড়া দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের ডান কোণে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ রয়েছে। এটি টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ক্যান্টিলাক্স’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৮১ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
পুতুল হাসিনার সাথে দেখা করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন
শেখ হাসিনার মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল মায়ের সাথে দেখা করেছেন বলে একটি ভিডিও গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়েছে। তবে বিশ্লেষণ প্রামাণ পাওয়া গেছে যে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। গণমাধ্যম কিংবা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্রেও এই ভিডিওর বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুতুলের কথা বলার সময় তার এবং পাশে থাকা শেখ হাসিনার মুখের নড়াচড়া সহ পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোয় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। অন্তত ২০২৩ সাল থেকে অনলাইনে থাকা একটি ছবি ব্যবহার করে ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
শেখ হাসিনার জন্মদিনে পুতুল দোয়া চেয়েছেন
গত সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার জন্মদিনে মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল মাকে পাশে রেখে মায়ের জন্য দোয়া চেয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে বিশ্লেষণে ভিডিওটি বাস্তব নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর উপাদানগুলোতে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে পরিলক্ষিত হয়। পুতুলের কথা বলার সময় তার মুখভঙ্গি ও নড়াচড়া এবং পাশে থাকা শেখ হাসিনার মুখভঙ্গি ও নড়াচড়া সহ অন্যান্য বিষয়ে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। অন্তত ২০২১ সাল থেকে অনলাইনে থাকা একটি ছবি ব্যবহার করে ডিপফেক প্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে পুতুল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভিডিওবার্তা দিয়েছেন
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দলের নেতাকর্মীদের দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ভিডিওবার্তা প্রচার করেছেন। ভিডিওতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বলতে শোনা যায়, “আমি পুতুল। আমাদের নেতাকর্মীদের জানাই শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা। আমার মা দেশে থাকলে পূজা আরো জমজমাট হতো। মা বাংলাদেশের পূজাকে খুব মিস করছে। মা এবার ভারতেই পূজার আনন্দ উপভোগ করবে। মায়ের জন্য দোয়া করবেন। সামনে পূজায় আমরা সবাই একসাথে আনন্দ করব। আমরা একসাথে পূজা উদযাপন করব। এজন্যই মা বলতো ধর্ম যার যার উৎসব সবার।” তবে ভিডিওটিও বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হয়ে তার দেওয়া একটি ভিডিওবার্তার ফুটেজকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ডিপফেক-ও-মিটার এর মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৫ শতাংশ।
পুতুল দেশে ফিরে আ.লীগের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন
সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন জানিয়ে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন দাবি করে গত সেপ্টেম্বরে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। ভিডিওটিতে কথিত সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বলতে শোনা যায়, “আমার নাম পুতুল। তারেক রহমানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ থাকলে সেটা আমি। আপনারা কি বলেন? আমি দেশে ফিরে আসবো, দলের দায়িত্ব নেবো। এবং খুব শীঘ্রই কিছু করবো ব্যাস। আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাকে নিজেই রাজনীতির দায়িত্ব নিতে হবে। ববি আর জয়কে দিয়ে কিছুই হবেনা।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পুরোনো একটি ছবি ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় ভয়েসওভার যুক্ত করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ হরতাল পালনের ডাক দিয়েছে
নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। এতে ভাঙ্গায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরই প্রেক্ষিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের হরতাল পালনের দৃশ্য। তবে এটিও বাস্তব নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভিডিওটির উপাদানগুলোতে এআইজনিত বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
জামায়াত-শিবির বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
গত আগস্টে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করে হয়, এটি জামায়াত-শিবির বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্য। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বেশ কিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া বিক্ষোভ মিছিলের ব্যানারগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এতে থাকা লেখা অর্থপূর্ণ নয়। সবগুলো ব্যানারের লেখা-ই বিকৃত। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি, কেননা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় বাংলা লেখা সম্বলিত কোনো ব্যানার বা ছবি তৈরি করতে গেলে লেখাগুলো বিকৃত হয়ে যায়।
ছাত্রীসংস্থার মেয়েরা বলছেন, জামায়াত নেতারা তাদেরকে ভোগ করতে চায়
গত জুলাইয়ে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয় যেখানে একটি গলির মধ্যে হিজাব পরিহিত কয়েকজন তরুনীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে সামনের তরুণীকে বলতে শোনা যায়, “জামাতি ভণ্ড নেতারা ছাত্রী সংস্থার মেয়েদের ভোগ করতে চায়।” তবে এটি বাস্তব কোনো ভিডিও নয়, আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওর তরুণীদের দাঁড়ানোর ভঙ্গি, কণ্ঠস্বর, এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে ভিডিওটিকে বাস্তব নয় বরং এআইজনিত লক্ষ্যণ পরিলক্ষিত হয়। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করলে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৮ শতাংশ বলে ফলাফল আসে। তাছাড়া, ভিডিওটির দৈর্ঘ ৮ সেকেন্ড হওয়ায় এটি গুগলের অত্যাধুনিক এআই টুল Veo দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ‘Veo’ টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম।
মুক্তিযুদ্ধকে জড়িয়ে ইসলামি বক্তার জামায়াতবিরোধী বক্তব্য
সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, সাদা পাঞ্জাবি ও পাগড়ি পরিহিত এক ব্যক্তির মঞ্চে বসে জামায়াত বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, “জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করেছিল, মা-বোনদের ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। জামায়াতকে ভোট দেবে না আলেম সমাজ।” তবে ভিডিওটি কোনো ইসলামি বক্তার বাস্তব বক্তব্যের নয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটির বিভিন্ন ফ্রেম বিশ্লেষণে, মুখমণ্ডলের বিকৃতি, চোখ ও ঠোঁটের অস্বাভাবিক গঠন, আলো ছায়ার ভারসাম্যহীনতা, চুল ও ব্যাকগ্রাউন্ডে অতিরিক্ত মসৃণতার মতো এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওর একাধিক সাধারণ লক্ষণ এই ভিডিওতে লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া, ভিডিওটির দৈর্ঘ্য ৮ সেকেন্ড, যা গুগলের এআই ভিডিও জেনারেশন টুল ‘Veo’-এর সঙ্গে মিলে যায়। এই টুল দিয়ে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করা সম্ভব এবং সম্প্রতি এর মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও ছড়ানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তাসনিম জারা প্রকাশ্যে হাফপ্যান্ট পরেছেন
গত জুলাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারার হাফপ্যান্ট পরিহিত একটি ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে ছবিটি বাস্তব নয়। বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ফুল প্যান্ট পরা একটি ছবি সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। ‘Fariha Nishat’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, তাসনিম জারার সঙ্গে তার তোলা একটি ছবি বিকৃত করে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পোস্টটিতে ভাইরাল ছবির পাশাপাশি মূল ছবিটিও যুক্ত করা হয়, যেখানে দুজনকে ফুল প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। এছাড়া ভাইরাল ছবিতে তাসনিম জারার হাতের আঙুলগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বিকৃতভাবে দেখা যায়, যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন এআই টুলের মাধ্যমে ছবির প্রেক্ষাপট অপরিবর্তিত রেখে পোশাক বা নির্দিষ্ট উপাদান সহজেই পরিবর্তন করা সম্ভব।
ছাগল চুরির সময় সিসিটিভি ক্যামেরায় নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ধরা পড়েছে
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, ছাগল চুরির মুুহুর্তে সিসিটিভি ক্যামেরায় জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীকে দেখতে পাওয়া গেছে। তবে ছবিটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, এর নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের জলছাপের অংশবিশেষ দেখা যায়। জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট গুগল ডিপমাইন্ড ‘ন্যানো বানানা’ নামে একটি উন্নত ইমেজ এডিটিং মডেল উন্মোচন করেছে, যা বর্তমানে গুগলের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট জেমিনির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এই মডেল ব্যবহারকারীদের উন্নত ও সৃজনশীলভাবে ছবি সম্পাদনার সুযোগ প্রদান করে। পরবর্তীতে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় নির্মিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ডিপফেক-ও-মিটার এ ছবিটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৩.৪৬ শতাংশ।
ঢাবি শিক্ষক মোনামী ও ডাকসু এজিএস মহিউদ্দিনের আলিঙ্গনরত ছবি
গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া মোনামী ও ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মো. মহিউদ্দীন খানের আলিঙ্গনরত একটি ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। তবে আলোচিত ছবিটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, মোনামী ও মহিউদ্দিনের প্র্থক দুটি ছবিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে এর নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের জলছাপ দেখা যায়। জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট গুগল ডিপমাইন্ড ‘ন্যানো বানানা’ নামে একটি উন্নত ইমেজ এডিটিং মডেল উন্মোচন করেছে, যা বর্তমানে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল জেমিনির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এটি ব্যবহারকারীদের উন্নত ও সৃজনশীলভাবে ছবি সম্পাদনার সুযোগ প্রদান করে। এর একটি বিশেষ ফিচার হলো ‘ব্লেন্ড ফটোস টুগেদার’, যার মাধ্যমে পৃথকভাবে তোলা একাধিক ছবি একত্রিত করে নতুন একটি দৃশ্য তৈরি করা সম্ভব।
ডাকসুর ফাতিমা তাসনিম জুমার আপত্তিকর ছবি
গত সেপ্টেম্বরে ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমার ব্যক্তিগত ছবি দাবিতে দুইটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে ছবিগুলো ফাতিমা তাসনিম জুমার নয়। আদতে ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন দুই নারীর ছবি সংগ্রহ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে জুমার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরায় মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ভিডিও
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়। সেই বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য দাবি করে একটি ভিডিও গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে এর ডানদিকে নিচে ‘Veo’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ এর বিষয়ে জানা যায়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই টুল। যার সাহায্যে লেখা থেকে শব্দসহ ভিডিও তৈরি করা যায়। এছাড়া, ঘটনাস্থল মাইলস্টোন কলেজ হলেও ছড়ানো ভিডিওর ভবনের দেয়ালে ইংরেজিতে ‘Untie College’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়, যা অপ্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ, ভিডিওটি বাস্তব নয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরায় মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ছবি
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ধারণকৃত। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি। ছবিটি পর্যবেক্ষণে এতে আগুন ও ধোঁয়ার অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। তাছাড়া, সেখানে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ছিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান। তবে আলোচিত ছবির বিমানের সাথে এর গঠনগত পার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের ছবি
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা হিসেবে গত জুলাইয়ে একটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে তালিকাটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ছবি সম্বলিত ভুয়া এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে এতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের চেহারা প্রায় একইরকম। তাছাড়া, স্কুলের নামের বানান এবং অর্থবোধকতায়ও অসঙ্গতি পাওয়া যায়, যা সাধারণত এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি ছবিতে দেখা যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলটের স্ত্রীর আবেগঘন বক্তব্য
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পাইলট তৌকির ইসলাম নিহত হন। পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিও দাবি করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। ভিডিওটিতে কথিত নারীকে বলতে শোনা যায়, “আমি কখনও ভাবিনি, এত তাড়াতাড়ি আমার স্বামীকে হারাবো। ওকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। তৌকিরকে আপনারা ক্ষমা করে দিন। আই নেভার থট ইন মাই ড্রিম আই উড লুজ মাই হাজব্যান্ড সো কুইকলি। উই হেড মেনি ড্রিমস। প্লিজ এভ্রিওয়ান, ফরগিভ তৌকির।” তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে প্রদর্শিত নারীর অঙ্গভঙ্গি, মুখমণ্ডলের গঠন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। “৬ মাস আগে বিয়ে করেন বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট তৌকির” শিরোনামে প্রকাশিত আরটিভির প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তাঁর স্ত্রীর ছবিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সম্পাদনার মাধ্যমে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষক মেহেরীন চৌধুরীর শেষ বক্তব্য
গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আগুনের হাত থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। এরই প্রেক্ষিতে, মেহেরীন চৌধুরীর ‘শেষ বক্তব্য’ হিসেবে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি মেহরিন চৌধুরী আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি আপনাদের সন্তানদের কিছু হয় তবে আপনাদের আমার ওপর দিয়ে যেতে হবে। আপনার সন্তানদের রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। বিপদে-আপদে তাদের পাশে সবসময় থাকব।” তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। এটি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এআই-জনিত একাধিক অসঙ্গতি পাওয়া যায়। কথিত মেহেরীন চৌধুরীর মুখভঙ্গি, কথা বলার সময় ঠোঁট ও চোয়ালের নড়াচড়া, চোখের পলক এবং আঙ্গুলের অস্বাভাবিক দেখা যায়। মূলত মেহরীন চৌধুরীর ভিন্ন একটি বক্তব্যের ভিডিওকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ডিপফেক শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
শিক্ষার্থীদের ‘JULY CDi’ গ্রাফিতি অঙ্কণ
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, শিক্ষার্থীরা দেয়ালে ‘JULY CDi’ নামের গ্রাফিতি অঙ্কন করেছেন। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্লেষণে ভিডিওটিতে এআইজনিত বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে ৬টি আঙুল দেখা যায়। তাছাড়া, ভিডিওটিতে গুগলের ‘Veo’ জলছাপ রয়েছে। ‘Veo’ গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল, যা লেখা থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮০.৯ শতাংশ।
নুরকে হত্যা করতে ভারতীয় ‘র’ সদস্য শিব সংকর দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়
গত ২৯ আগস্ট রাতে বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলপ্রয়োগ করলে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন। এরই প্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে এক ব্যক্তির ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়, তাঁর নাম শিব সংকর দাস। তিনি ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র এর সদস্য। নুরকে হত্যা করতে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে ছবিটি শিব শংকর দাস নামে কারোর নয়। প্রকৃতপক্ষে পল্টন থানার ওসির গাড়িচালক পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা ছবিকে শিব শংকর দাসের ছবি বলে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে মুখমন্ডলের গঠন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি ছবিতে দেখা যায়। এ থেকে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিটি মূলত কনস্টেবল মিজানুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তীতে এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে ছবিটি যাচাই করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭৯.৭ শতাংশ দেখা যায়। এছাড়াও, এআই ও ডিপফেক কন্টেন্ট শনাক্তকরণ আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এ ছবিটি বিশ্লেষণ করলে এটি এআই দিয়ে তৈরি বা ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়।
গাইবান্ধায় দুর্গাপূজার প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ
গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার হামিন্দপুর (কামারপাড়া) এলাকায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে তৈরি করা প্রতিমায় দুবৃত্তরা আগুন দিয়েছে। তবে ছবিটি বাস্তব নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ছবি। কোনো গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্রে ছবির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে একাধিক এআইজনিত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট হাইভ মডারেশনে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৮ শতাংশ।
ছবিটি ভিন্ন আরেক এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
বয়স্ক ব্যক্তির ‘অবুঝ ছাত্ররা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে দেশ ধ্বংস করেছে’ বলে মন্তব্য
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একজন বয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। যেখানে সাংবাদিক তাঁর কাছে ৫ আগস্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ‘অবুঝ ছাত্ররা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে দেশ ধ্বংস করেছে’ বলে মন্তব্য করেন। তবে এটিও বাস্তব কোনো ভিডিও নয়। ভিডিওটিতে বেশ কিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ভিডিওটির নিচের অংশে দেখতে পাওয়া বাংলা লেখাগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ যার কোনো অর্থবোধকতা নেই। ভিডিওটিতে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ দেখা যায়। veo টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭৩ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
‘‘৫ তারিখ না আসলে বুঝতাম না টোকাই কেমনে নেতা হয়’’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এক ব্যক্তি নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছেন বলে “৫ তারিখ না আসলে বুঝতাম না” শিরোনামে একটি ভিডিও গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। ভিডিওটিতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘৫ তারিখ না আসলে বুঝতাম না টোকাই কেমনে নেতা হয়।’’ তবে ভিডিওটি আসল নয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কথা বলা ব্যক্তির পেছনে থাকা লোকজনকে নড়াচড়া কিংবা চোখের পলক ফেলতে দেখা যায়নি এবং উক্ত ব্যক্তির মুখ নড়লেও চোখের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কন্টেন্টে দেখা যায়। ভিডিওটিতে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ দেখা যায়। veo টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনে ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৯ শতাংশ।
‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ’
গত জুলাইয়ে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ’ স্লোগানের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলনের ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে এআই সংক্রান্ত কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটিতে গুগলের জেনারেটিভ এআই টুল ‘Veo’ এর জলছাপ দেখা যায়। veo টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
দুই বাসের বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চাপা পড়ার দৃশ্য
গত জুলাইয়ে দুই বাসের বেপরোয়া ওভারটেকিংয়ে মোটরসাইকেল চাপা পড়ার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি। এতে একটি সিএনজিকে অস্বাভাবিকভাবে উল্টো দিকে চলতে দেখা যায় এবং দুইটি বাসের মধ্যে একটি বাসের উভয় দিকেই ফ্রন্টভিউ দেখা যায়। ভিডিওটির নিচের দিকে ‘MINIMAX | Hailuo AI’ লেখা জলছাপও দেখা যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Hailuo Ai’ মিনিম্যাক্স নামের একটি চাইনিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৬ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এছাড়া এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ভিডিওটি এআই দ্বারা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৩ শতাংশ।
পটুয়াখালী পায়রা গঞ্জ নদীতে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা
গত জুলাইয়ে ‘পটুয়াখালী পায়রা গঞ্জ নদীতে পড়ে গেছে যাত্রীসহ বাস!’ ক্যাপশনে বাস দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, পটুয়াখালীতে ‘পায়রা গঞ্জ’ নামে কোনো নদী বা স্থান নেই। Cozyclouds1 নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৯ জুন প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে ক্যাপশনে এটিকে খরস্রোতা নদীতে পড়ে বাস দুর্ঘটনার ভিডিও বলে উল্লেখ করা হয়৷ ভিডিওটিতে ‘AI Info’ লেবেল যুক্ত করা আছে, অর্থাত ভিডিওটির পোস্টদাতা নিজেই এটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি বলে চিহ্নিত করেছেন। Cozyclouds1 নামের ফেসবুক পেজটির ডেসক্রিপশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় নির্মিত কন্টেন্ট প্রচার করে।
২০০ বছর বয়সী মানুষের ভিডিও
গত জুলাইয়ে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, ভিডিওর ব্যক্তির বয়স ২০০ বছর। তবে ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এর কণ্ঠস্বর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। এআই কন্টে ন্নটে টেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।