| এক্সপ্লেইনার | এক্সপ্লেইন
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যের বিকৃতি জুলাইকে ‘মব’-এর সাথে মেলানোর বিপক্ষেই বলেছেন মাহফুজ আলম
৯ অক্টোবর ২০২৫
পিআইবি’র প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভায় বক্তারা মব ভায়োলেন্স ও গণমাধ্যমের ন্যারেটিভ ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাঁর বক্তব্যে মব ভায়োলেন্স ও এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের ন্যারেটিভ নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর সেই বক্তব্যের কিছু অংশ আলাদা ও বিকৃতি করে বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করেছে দেশ টিভি। গণমাধ্যমটির বানানো ফটোকার্ডে যে বাক্যটি লেখা হয়েছে, মাহফুজ আলম তা বলেননি। এমনকি ফটোকার্ডে লেখা “আজ তা প্রতীয়মান হচ্ছে” কথাটুকুও তাঁর বক্তব্যের কোনো অংশে নেই।
মাহফুজ আলম তাঁর পূর্ববর্তী বক্তাদের আলোচনার জের ধরে বলেন, “প্রথমে শুরু করতে চাই মব ভায়োলেন্স শব্দটা দিয়ে। প্রথমে মিডিয়া যখন মবের আলোচনা করতেছিল এবং রাষ্ট্রের যখন নিরাপত্তার ইস্যু, আইনশৃঙ্খলার ইস্যু, এটা নিয়ে আমি একটু বলি…জুলাইয়ের একজন কর্মী হিসেবে এবং রাষ্ট্রের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে কিছু কথা বলি। এবং আমাদের এখন সময় এসেছে যে কথাগুলো স্পষ্ট করার, যে, কী ঘটেছিল এবং কী ঘটতেছে।”
“মব ভায়োলেন্স” নিয়ে ন্যারেটিভ তৈরী করে কীভাবে এটিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল হিসেবে গণমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, তা দেখিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “মব ভায়োলেন্স জিনিসটা, এখন এক বছর পরে এসে যেটা আমাদের অনুভূতি, এবং উনাদের অভিজ্ঞতা যেটা বলতেছে, এটা এখন ইকুইটেড (মিলিয়ে দেখা) হয়ে যাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাথে। এবং এমন মনে হচ্ছে যে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে যেহেতু মব ভায়োলেন্স হয়েছে, সব জায়গায়, ছাত্ররা, বা সাধারণ নাগরিক, কোথাও কোথাও কোনো ধর্মীয় সেক্ট বা গোষ্ঠী– ভায়োলেন্স করেছেন। (এমনকি) কোনোরকম রাজনৈতিক সভা-সমাবেশও করেছেন ওদেরকেও মব বলা হয়েছে। বিশেষ করে দেখেন, একটি দলের প্রধান, নূরুল হক নূর, উনাকে মারধরের ক্ষেত্রে। এটা ন্যারেটিভটা যেটা আছে আরকি।” বক্তব্যের এই অংশে নূরুল হক নূরদের আন্দোলনকেও “মব” আখ্যা দিয়ে ন্যারেটিভ তৈরীর সমালোচনা উঠে আসে।
তাঁর বক্তব্যের যে অংশ নিয়ে দেশ টিভি ফটোকার্ড বানিয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যটি হলো, “এই “মব ভায়োলেন্স” থেকে আরও অনেকগুলি ন্যারেটিভ–আন্ডার আওয়ার ওয়াচ–এটাই আমাদের জন্য দুঃখজনক। এবং এখানে অংশ হওয়াটাও এক ধরণের বিব্রতকর ছিল। আমাদেরকেও বলতে হচ্ছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে। বা সবকিছু… কিন্তু ঘুরেফিরে এই বয়ানটা এমন এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, যেদিন… আপনাদের মনে থাকবে, ৮ই আগস্টে, এই ভুল আমি স্বীকার করে নিচ্ছি আজকে যে, ৮ই আগস্টে বা ৬ আগস্ট হবে, সজীব ওয়াজেদ জয় যিনি, উনি কিন্তু একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, ‘’মবোক্রেসি’ শব্দটা। আজকে বাংলাদেশে ঘুরেফিরে ওই শব্দের ভিতর নিয়ে যাওয়ার সুযোগ, নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, এটা আমাদের একটা ব্যর্থতা। আমি স্বীকার করে নিচ্ছি এবং আমরা এখানে অনেক কিছু হয়তো সামাল দিতে পারি নাই।”
এই বক্তব্যে তিনি মব ভায়োলেন্সের ঘটনাগুলোকে যেমন অস্বীকার করেন নি, তেমনি এটিকে ঘিরে যে ন্যারেটিভ তৈরী করা হয়েছে, যা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ন্যারেটিভের সঙ্গে মিলে যায়, সেটির সমালোচনাও করেছেন। দেশটিভি’র বানানো ফটোকার্ডে যে বাক্যটি লেখা হয়েছে, তা মাহফুজ আলমের বক্তব্য থেকে ভিন্ন।
খেয়ল করার মতো বিষয় হলো, দেশটিভির ফটোকার্ড এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে মনে হতে পারে, মাহফুজ আলম ভুল ছিলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় সঠিক ছিলেন। দেশটিভির ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট সেকশনেও দেখা যায়, অনেকেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ভুল ছিল বলে মাহফুজ আলম স্বীকার করেছেন, এমন মন্তব্য করছেন। অথচ মাহফুজ আলম মব ভায়োলেন্সকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাথে মিলিয়ে দেখার যে ন্যারেটিভত, তাঁর সমালোচনা করেই বক্তব্য দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গণমাধ্যমটি ফটোকার্ড প্রকাশের কিছুক্ষণ পরে তা ডিলিট করে দেয়, কিন্তু ততক্ষণে তা কয়েকশবার শেয়ার করা হয়।
Topics:
১৩ অক্টোবর ২০২৫
ব্যাক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বাংলাদেশের কৃষক ও জনগণের সক্ষমতার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা
৯ অক্টোবর ২০২৫
শুধু বাংলাদেশের নয়, অর্থ ঘাটতিতে শান্তিরক্ষা মিশনের এক চতুর্থাংশ ছাটাই
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা যে কোনো সময় তুলে নেয়া’র কথা বলেননি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
CA Dr. Yunus Did Not Say ‘Ban on Awami League's Activities’ Would Be Lifted
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
যা যা জানা গেলো ।। জোর করে চুল দাড়ি কেটে ‘ভিডিও কন্টেন্ট’ বানানোর হোতা কারা?
আপনার মতামত দিন
এই পোস্টটি কি আপনার জন্য সহায়ক ছিল?
এখনো কেউ ভোট দেয়নি। আপনিই প্রথম হোন!
0%
0%
আপনার মতামত শেয়ার করুন:
| মন্তব্য সমূহ:
এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্যটি করুন!
এক্সপ্লেইনার
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যের বিকৃতি জুলাইকে ‘মব’-এর সাথে মেলানোর বিপক্ষেই বলেছেন মাহফুজ আলম
৯ অক্টোবর ২০২৫
পিআইবি’র প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভায় বক্তারা মব ভায়োলেন্স ও গণমাধ্যমের ন্যারেটিভ ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাঁর বক্তব্যে মব ভায়োলেন্স ও এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের ন্যারেটিভ নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর সেই বক্তব্যের কিছু অংশ আলাদা ও বিকৃতি করে বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করেছে দেশ টিভি। গণমাধ্যমটির বানানো ফটোকার্ডে যে বাক্যটি লেখা হয়েছে, মাহফুজ আলম তা বলেননি। এমনকি ফটোকার্ডে লেখা “আজ তা প্রতীয়মান হচ্ছে” কথাটুকুও তাঁর বক্তব্যের কোনো অংশে নেই।
মাহফুজ আলম তাঁর পূর্ববর্তী বক্তাদের আলোচনার জের ধরে বলেন, “প্রথমে শুরু করতে চাই মব ভায়োলেন্স শব্দটা দিয়ে। প্রথমে মিডিয়া যখন মবের আলোচনা করতেছিল এবং রাষ্ট্রের যখন নিরাপত্তার ইস্যু, আইনশৃঙ্খলার ইস্যু, এটা নিয়ে আমি একটু বলি…জুলাইয়ের একজন কর্মী হিসেবে এবং রাষ্ট্রের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে কিছু কথা বলি। এবং আমাদের এখন সময় এসেছে যে কথাগুলো স্পষ্ট করার, যে, কী ঘটেছিল এবং কী ঘটতেছে।”
“মব ভায়োলেন্স” নিয়ে ন্যারেটিভ তৈরী করে কীভাবে এটিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল হিসেবে গণমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, তা দেখিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “মব ভায়োলেন্স জিনিসটা, এখন এক বছর পরে এসে যেটা আমাদের অনুভূতি, এবং উনাদের অভিজ্ঞতা যেটা বলতেছে, এটা এখন ইকুইটেড (মিলিয়ে দেখা) হয়ে যাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাথে। এবং এমন মনে হচ্ছে যে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে যেহেতু মব ভায়োলেন্স হয়েছে, সব জায়গায়, ছাত্ররা, বা সাধারণ নাগরিক, কোথাও কোথাও কোনো ধর্মীয় সেক্ট বা গোষ্ঠী– ভায়োলেন্স করেছেন। (এমনকি) কোনোরকম রাজনৈতিক সভা-সমাবেশও করেছেন ওদেরকেও মব বলা হয়েছে। বিশেষ করে দেখেন, একটি দলের প্রধান, নূরুল হক নূর, উনাকে মারধরের ক্ষেত্রে। এটা ন্যারেটিভটা যেটা আছে আরকি।” বক্তব্যের এই অংশে নূরুল হক নূরদের আন্দোলনকেও “মব” আখ্যা দিয়ে ন্যারেটিভ তৈরীর সমালোচনা উঠে আসে।
তাঁর বক্তব্যের যে অংশ নিয়ে দেশ টিভি ফটোকার্ড বানিয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যটি হলো, “এই “মব ভায়োলেন্স” থেকে আরও অনেকগুলি ন্যারেটিভ–আন্ডার আওয়ার ওয়াচ–এটাই আমাদের জন্য দুঃখজনক। এবং এখানে অংশ হওয়াটাও এক ধরণের বিব্রতকর ছিল। আমাদেরকেও বলতে হচ্ছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে। বা সবকিছু… কিন্তু ঘুরেফিরে এই বয়ানটা এমন এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, যেদিন… আপনাদের মনে থাকবে, ৮ই আগস্টে, এই ভুল আমি স্বীকার করে নিচ্ছি আজকে যে, ৮ই আগস্টে বা ৬ আগস্ট হবে, সজীব ওয়াজেদ জয় যিনি, উনি কিন্তু একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, ‘’মবোক্রেসি’ শব্দটা। আজকে বাংলাদেশে ঘুরেফিরে ওই শব্দের ভিতর নিয়ে যাওয়ার সুযোগ, নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, এটা আমাদের একটা ব্যর্থতা। আমি স্বীকার করে নিচ্ছি এবং আমরা এখানে অনেক কিছু হয়তো সামাল দিতে পারি নাই।”
এই বক্তব্যে তিনি মব ভায়োলেন্সের ঘটনাগুলোকে যেমন অস্বীকার করেন নি, তেমনি এটিকে ঘিরে যে ন্যারেটিভ তৈরী করা হয়েছে, যা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ন্যারেটিভের সঙ্গে মিলে যায়, সেটির সমালোচনাও করেছেন। দেশটিভি’র বানানো ফটোকার্ডে যে বাক্যটি লেখা হয়েছে, তা মাহফুজ আলমের বক্তব্য থেকে ভিন্ন।
খেয়ল করার মতো বিষয় হলো, দেশটিভির ফটোকার্ড এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে মনে হতে পারে, মাহফুজ আলম ভুল ছিলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় সঠিক ছিলেন। দেশটিভির ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট সেকশনেও দেখা যায়, অনেকেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ভুল ছিল বলে মাহফুজ আলম স্বীকার করেছেন, এমন মন্তব্য করছেন। অথচ মাহফুজ আলম মব ভায়োলেন্সকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাথে মিলিয়ে দেখার যে ন্যারেটিভত, তাঁর সমালোচনা করেই বক্তব্য দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গণমাধ্যমটি ফটোকার্ড প্রকাশের কিছুক্ষণ পরে তা ডিলিট করে দেয়, কিন্তু ততক্ষণে তা কয়েকশবার শেয়ার করা হয়।