| বিশ্লেষণ

হত্যা মামলার পরিসংখ্যানকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন

১১ ডিসেম্বর ২০২৫


হত্যা মামলার পরিসংখ্যানকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন

পুলিশের অপরাধ বিষয়ক পরিসংখ্যান থেকে বণিকবার্তা ‘এক দশকের মধ্যে দেশে দৈনিক সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড চলতি বছর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেছে। শিরোনামটি বিভ্রান্তিকর প্রধানত দুটো কারণে। প্রথমত, এই পরিসংখ্যান হত্যা-মামলা দায়েরের, হত্যাকাণ্ডের নয়। দ্বিতীয়ত, এই পরিসংখ্যানে শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলাও যুক্ত হয়েছে। 


পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানের বণিকবার্তা যে গড় হিসেব করেছে, তাতে পূর্বে সংগঠিত অনেক হত্যাকাণ্ডের মামলাও যুক্ত আছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দায়ের হওয়া ৯৫২টি হত্যা-মামলার মধ্যে ৭৭টি মামলাই ছিল ২০০৯ থেকে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের। এই উদাহরণ থেকে স্পষ্ট হয় যে, পুলিশের অপরাধ বিষয়ক পরিসংখ্যান মূলত কোনো কোনো মাসে কয়টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা নয়, বরং ওই মাসে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা প্রকাশ করে। পুলিশের পরিসংখ্যানে হত্যাকাণ্ডের চিত্র নয়, হত্যা-মামলা দায়েরের চিত্র উঠে আসে। 


প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত কমপক্ষে ১১৩০টি খুনের ঘটনায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরও এটি নিশ্চিত করেছে। ফলে পূর্ববর্তী সময়ের হত্যার মামলাগুলোকে বর্তমান সময়ের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।


এখানে উল্লেখযোগ্য আরেকটি বিষয় হলো, পুলিশের অপরাধবিষয়ক পরিসংখ্যান বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্তন আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারির আমলে উচ্চ ও মধ্যম পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার সুপারিশে পুলিশের ওয়েবসাইটে অপরাধ পরিসংখ্যান আপলোড ও প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ধারণা করা যায়, বিগত সরকারের সময়ে পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল। এ ছাড়া, ওই সময় সংঘটিত সহস্রাধিক হত্যাকাণ্ডের মামলা এখন দায়ের হওয়া থেকে বোঝা যায়, তখন মামলা করার ক্ষেত্রে ভয় ও বাধা ছিল, যা সে সময়ের পরিসংখ্যানে হত্যার সংখ্যা বাস্তবের চেয়ে কম দেখিয়েছে। তাই হত্যামামলা দায়েরের পরিসংখ্যান দিয়ে তুলনা করলে সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়।


পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এইচএম শাহাদাত হোসাইনের বক্তব্য থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তিনি বণিক বার্তাকে বলেছেন, ‘চলতি বছরে খুনের মামলা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এর মানে এই নয় যে খুনের ঘটনাও বেড়েছে। অনেকেই পুরনো বা পূর্ববর্তী বছরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে মামলা করতে পারেননি। এখন অভিযোগ পাওয়ার ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। এ রকম মামলা রয়েছে শতাধিক। আদতে এটি মূলত আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নথিভুক্তকরণের উন্নতির ফল। প্রকৃত হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধি নয়।





Topics:



বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন, পত্রিকায় যেভাবে এসেছে
২ ডিসেম্বর ২০২৫

বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন, পত্রিকায় যেভাবে এসেছে

যুবদল নেতা হত্যার ঘটনাকে ভারতীয় মিডিয়ায় হাসিনার রায় পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে প্রচার
১৮ নভেম্বর ২০২৫

যুবদল নেতা হত্যার ঘটনাকে ভারতীয় মিডিয়ায় হাসিনার রায় পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে প্রচার

Indian media frames the murder of a Jubo Dal leader as post-verdict violence following Hasina’s sentencing
১৮ নভেম্বর ২০২৫

Indian media frames the murder of a Jubo Dal leader as post-verdict violence following Hasina’s sentencing

ইন্টারনেটে আগুন সন্ত্রাসের নির্দেশনা ও উষ্কানি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের এক্টিভিস্টরা
১২ নভেম্বর ২০২৫

ইন্টারনেটে আগুন সন্ত্রাসের নির্দেশনা ও উষ্কানি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের এক্টিভিস্টরা

AI-Generated Online Content
Targeting Political Parties, Government, and Security Forces
২৮ অক্টোবর ২০২৫

AI-Generated Online Content

Targeting Political Parties, Government, and Security Forces

আপনার মতামত দিন

এই পোস্টটি কি আপনার জন্য সহায়ক ছিল?

এখনো কেউ ভোট দেয়নি। আপনিই প্রথম হোন!

0%

0%

আপনার মতামত শেয়ার করুন:

| মন্তব্য সমূহ:

এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্যটি করুন!



হত্যা মামলার পরিসংখ্যানকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন

বিশ্লেষণ

হত্যা মামলার পরিসংখ্যানকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন

১১ ডিসেম্বর ২০২৫

হত্যা মামলার পরিসংখ্যানকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন

পুলিশের অপরাধ বিষয়ক পরিসংখ্যান থেকে বণিকবার্তা ‘এক দশকের মধ্যে দেশে দৈনিক সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড চলতি বছর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেছে। শিরোনামটি বিভ্রান্তিকর প্রধানত দুটো কারণে। প্রথমত, এই পরিসংখ্যান হত্যা-মামলা দায়েরের, হত্যাকাণ্ডের নয়। দ্বিতীয়ত, এই পরিসংখ্যানে শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলাও যুক্ত হয়েছে। 


পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানের বণিকবার্তা যে গড় হিসেব করেছে, তাতে পূর্বে সংগঠিত অনেক হত্যাকাণ্ডের মামলাও যুক্ত আছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দায়ের হওয়া ৯৫২টি হত্যা-মামলার মধ্যে ৭৭টি মামলাই ছিল ২০০৯ থেকে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের। এই উদাহরণ থেকে স্পষ্ট হয় যে, পুলিশের অপরাধ বিষয়ক পরিসংখ্যান মূলত কোনো কোনো মাসে কয়টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা নয়, বরং ওই মাসে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা প্রকাশ করে। পুলিশের পরিসংখ্যানে হত্যাকাণ্ডের চিত্র নয়, হত্যা-মামলা দায়েরের চিত্র উঠে আসে। 


প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত কমপক্ষে ১১৩০টি খুনের ঘটনায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরও এটি নিশ্চিত করেছে। ফলে পূর্ববর্তী সময়ের হত্যার মামলাগুলোকে বর্তমান সময়ের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।


এখানে উল্লেখযোগ্য আরেকটি বিষয় হলো, পুলিশের অপরাধবিষয়ক পরিসংখ্যান বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্তন আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারির আমলে উচ্চ ও মধ্যম পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার সুপারিশে পুলিশের ওয়েবসাইটে অপরাধ পরিসংখ্যান আপলোড ও প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ধারণা করা যায়, বিগত সরকারের সময়ে পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল। এ ছাড়া, ওই সময় সংঘটিত সহস্রাধিক হত্যাকাণ্ডের মামলা এখন দায়ের হওয়া থেকে বোঝা যায়, তখন মামলা করার ক্ষেত্রে ভয় ও বাধা ছিল, যা সে সময়ের পরিসংখ্যানে হত্যার সংখ্যা বাস্তবের চেয়ে কম দেখিয়েছে। তাই হত্যামামলা দায়েরের পরিসংখ্যান দিয়ে তুলনা করলে সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়।


পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এইচএম শাহাদাত হোসাইনের বক্তব্য থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তিনি বণিক বার্তাকে বলেছেন, ‘চলতি বছরে খুনের মামলা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এর মানে এই নয় যে খুনের ঘটনাও বেড়েছে। অনেকেই পুরনো বা পূর্ববর্তী বছরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে মামলা করতে পারেননি। এখন অভিযোগ পাওয়ার ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। এ রকম মামলা রয়েছে শতাধিক। আদতে এটি মূলত আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নথিভুক্তকরণের উন্নতির ফল। প্রকৃত হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধি নয়।