| বিশ্লেষণ
খাগড়াছড়িতে সহিংসতা: চারটি পত্রিকার উপস্থাপন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
খাগড়াছড়িতে ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার ১২ ঘন্টার মধ্যে অর্থাৎ পরদিন ভোরে ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে শয়ন শীল নামে একজন অভিযুক্তকে আটক করা হয় এবং তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল ৩ জন। ওই দিনই ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
২৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে আধাবেলা অবরোধ পালিত হয়। এরপর একই ব্যানারে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ পালিত হয়। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদরের অন্তত চারটি স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। সংঘাত অব্যাহত থাকায় দুপুরে খাগড়াছড়ি সদর এবং বিকেলে গুইমারায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর অবরোধ চলমান অবস্থায় গুইমারার রামেসু বাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এই দিন সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন এবং আহত হন আরও অনেকে।
এই ঘটনার সংবাদ কভারেজ আজ ২৯ সেপ্টেম্বর পত্রিকাগুলোতে কীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তা দেখতে বাংলাফ্যাক্ট চারটি জাতীয় দৈনিকের প্রিন্ট সংস্করণ বিশ্লেষণ করেছে। এগুলো হলো, প্রথম আলো, সমকাল, আমার দেশ ও নিউ এইজ।
চারটি পত্রিকাই ঘটনাটি প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বের সঙ্গে ছাপিয়েছে। এর মধ্যে নিউ এইজ লিড সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করেছে, প্রথম আলো ও সমকাল দ্বিতীয় লিড করেছে, আর আমার দেশ প্রকাশ করেছে “বিশেষ প্রতিবেদন”। নিহত তিনজনের বিষয়ে কেবল নিউ এইজ তাদের জাতিগত পরিচয় ‘মারমা’ উল্লেখ করেছে। বিপরীতে আমার দেশ প্রতিবেদনের কোথাও নিহতদের প্রসঙ্গই উল্লেখ করেনি।
২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামেসু বাজারে কারা আগুন দিয়েছে, তা নিয়ে আলোচ্য পত্র্রিকাগুলিতে ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপন পাওয়া যায়। তবে কোনো প্রতিবেদনেই জড়িতদের পরিচয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। প্রথম আলো ও সমকাল প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানিয়েছে, মুখোশ পরা ২০-২৫ জন লোক রামেসু বাজারে আগুন দেয়। প্রথম আলো লিখেছে, “অবরোধ চলাকালে গতকাল বেলা একটায় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে আগুন দেওয়া হয়।” প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, বাজারের দোকানদারদের অধিকাংশ পাহাড়ি। সমকাল তাদের প্রতিবেদনে “পাহাড়িদের দাবি” উদ্ধৃত করে বলেছে, স্থানীয় বাঙালিরা বাজারে আগুন দিয়েছে। নিউ এইজও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে ‘miscreants’-(দুষ্কৃতিকারী)- এর কথা উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে আমার দেশের প্রতিবেদনে আগুন লাগানোর ঘটনা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
সমকাল লিখেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের “ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া”র ঘটনা ঘটেছে এবং পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে” টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। নিউজ এইজ তাদের খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবেদকের সূত্রে লিখেছে, অবরোধকারীরা সেনাবাহিনীর দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে এবং তাদেরকে সরিয়ে দিতে সেনাবাহিনী গুলি ছোঁড়ে। প্রথম আলো দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে লিখেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহাড়িদের ওপর গুলি করেন। আমার দেশে এ ঘটনার উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন।'
এ বিষযে আরেকটি সংবাদ পরিবেশন করেছে প্রথম আলো। ৪র্থ পৃষ্ঠায় “সংযত আচরণ করার আহ্বান সেনাবাহিনীর” শিরোনামে তারা আইএসপিআর-এর বিবৃতি নিয়ে আলাদা সংবাদ প্রকাশ করে। আইএসপিআর তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করে, “গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনার এক বছর পূর্তি হিসাবে এই বছর ইউপিডিএফ এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে এবং অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করে”।
সমকাল পঞ্চম পাতায় ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদী মিছিল, নিন্দা বিবৃতি নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এদিকে আমার দেশ-এর প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ভারতের ইশারায় এক হচ্ছে জেএসএস-ইউপিডিএফ’। সংগঠনদুটিকে "সন্ত্রাসী সংগঠন" আখ্যা দিয়ে “দেশি-বিদেশি চক্রান্ত”র অংশ হিসেবে তারা পাহাড় অশান্ত করছে বলে উল্লখ করা হয়। সংবাদের সূত্র হিসেবে ‘সংশ্লিষ্ট সূত্র’ ও ‘সূত্রগুলো’ ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়।
আমার দেশ তাদের প্রতিবেদনে খাগড়াছড়ি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও উস্কানির কথা উল্লেখ করে। উল্লেখ্য, চলমান উত্তেজনার মধ্যে বিভিন্ন পক্ষ থেকে ছড়ানো বেশ কয়েকটি গুজব খণ্ডন করেছে বাংলাফ্যাক্ট।
খাগড়াছড়ি নিয়ে বাংলাফ্যাক্টের প্রতিবেদনের লিংক এখানে
Topics:
২ ডিসেম্বর ২০২৫
বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন, পত্রিকায় যেভাবে এসেছে
১৮ নভেম্বর ২০২৫
যুবদল নেতা হত্যার ঘটনাকে ভারতীয় মিডিয়ায় হাসিনার রায় পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে প্রচার
১৮ নভেম্বর ২০২৫
Indian media frames the murder of a Jubo Dal leader as post-verdict violence following Hasina’s sentencing
১২ নভেম্বর ২০২৫
ইন্টারনেটে আগুন সন্ত্রাসের নির্দেশনা ও উষ্কানি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের এক্টিভিস্টরা
২৮ অক্টোবর ২০২৫
AI-Generated Online Content
Targeting Political Parties, Government, and Security Forces
আপনার মতামত দিন
এই পোস্টটি কি আপনার জন্য সহায়ক ছিল?
এখনো কেউ ভোট দেয়নি। আপনিই প্রথম হোন!
0%
0%
আপনার মতামত শেয়ার করুন:
| মন্তব্য সমূহ:
এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্যটি করুন!
বিশ্লেষণ
খাগড়াছড়িতে সহিংসতা: চারটি পত্রিকার উপস্থাপন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
খাগড়াছড়িতে ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার ১২ ঘন্টার মধ্যে অর্থাৎ পরদিন ভোরে ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে শয়ন শীল নামে একজন অভিযুক্তকে আটক করা হয় এবং তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল ৩ জন। ওই দিনই ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
২৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে আধাবেলা অবরোধ পালিত হয়। এরপর একই ব্যানারে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ পালিত হয়। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদরের অন্তত চারটি স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। সংঘাত অব্যাহত থাকায় দুপুরে খাগড়াছড়ি সদর এবং বিকেলে গুইমারায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর অবরোধ চলমান অবস্থায় গুইমারার রামেসু বাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এই দিন সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন এবং আহত হন আরও অনেকে।
এই ঘটনার সংবাদ কভারেজ আজ ২৯ সেপ্টেম্বর পত্রিকাগুলোতে কীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তা দেখতে বাংলাফ্যাক্ট চারটি জাতীয় দৈনিকের প্রিন্ট সংস্করণ বিশ্লেষণ করেছে। এগুলো হলো, প্রথম আলো, সমকাল, আমার দেশ ও নিউ এইজ।
চারটি পত্রিকাই ঘটনাটি প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বের সঙ্গে ছাপিয়েছে। এর মধ্যে নিউ এইজ লিড সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করেছে, প্রথম আলো ও সমকাল দ্বিতীয় লিড করেছে, আর আমার দেশ প্রকাশ করেছে “বিশেষ প্রতিবেদন”। নিহত তিনজনের বিষয়ে কেবল নিউ এইজ তাদের জাতিগত পরিচয় ‘মারমা’ উল্লেখ করেছে। বিপরীতে আমার দেশ প্রতিবেদনের কোথাও নিহতদের প্রসঙ্গই উল্লেখ করেনি।
২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামেসু বাজারে কারা আগুন দিয়েছে, তা নিয়ে আলোচ্য পত্র্রিকাগুলিতে ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপন পাওয়া যায়। তবে কোনো প্রতিবেদনেই জড়িতদের পরিচয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। প্রথম আলো ও সমকাল প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানিয়েছে, মুখোশ পরা ২০-২৫ জন লোক রামেসু বাজারে আগুন দেয়। প্রথম আলো লিখেছে, “অবরোধ চলাকালে গতকাল বেলা একটায় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে আগুন দেওয়া হয়।” প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, বাজারের দোকানদারদের অধিকাংশ পাহাড়ি। সমকাল তাদের প্রতিবেদনে “পাহাড়িদের দাবি” উদ্ধৃত করে বলেছে, স্থানীয় বাঙালিরা বাজারে আগুন দিয়েছে। নিউ এইজও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে ‘miscreants’-(দুষ্কৃতিকারী)- এর কথা উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে আমার দেশের প্রতিবেদনে আগুন লাগানোর ঘটনা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
সমকাল লিখেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের “ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া”র ঘটনা ঘটেছে এবং পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে” টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। নিউজ এইজ তাদের খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবেদকের সূত্রে লিখেছে, অবরোধকারীরা সেনাবাহিনীর দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে এবং তাদেরকে সরিয়ে দিতে সেনাবাহিনী গুলি ছোঁড়ে। প্রথম আলো দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে লিখেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহাড়িদের ওপর গুলি করেন। আমার দেশে এ ঘটনার উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন।'
এ বিষযে আরেকটি সংবাদ পরিবেশন করেছে প্রথম আলো। ৪র্থ পৃষ্ঠায় “সংযত আচরণ করার আহ্বান সেনাবাহিনীর” শিরোনামে তারা আইএসপিআর-এর বিবৃতি নিয়ে আলাদা সংবাদ প্রকাশ করে। আইএসপিআর তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করে, “গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনার এক বছর পূর্তি হিসাবে এই বছর ইউপিডিএফ এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে এবং অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করে”।
সমকাল পঞ্চম পাতায় ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদী মিছিল, নিন্দা বিবৃতি নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এদিকে আমার দেশ-এর প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ভারতের ইশারায় এক হচ্ছে জেএসএস-ইউপিডিএফ’। সংগঠনদুটিকে "সন্ত্রাসী সংগঠন" আখ্যা দিয়ে “দেশি-বিদেশি চক্রান্ত”র অংশ হিসেবে তারা পাহাড় অশান্ত করছে বলে উল্লখ করা হয়। সংবাদের সূত্র হিসেবে ‘সংশ্লিষ্ট সূত্র’ ও ‘সূত্রগুলো’ ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়।
আমার দেশ তাদের প্রতিবেদনে খাগড়াছড়ি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও উস্কানির কথা উল্লেখ করে। উল্লেখ্য, চলমান উত্তেজনার মধ্যে বিভিন্ন পক্ষ থেকে ছড়ানো বেশ কয়েকটি গুজব খণ্ডন করেছে বাংলাফ্যাক্ট।
খাগড়াছড়ি নিয়ে বাংলাফ্যাক্টের প্রতিবেদনের লিংক এখানে