| অনুসন্ধান

নামে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, কাজে ফ্যাসিস্ট

৮ ডিসেম্বর ২০২৫


নামে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, কাজে ফ্যাসিস্ট

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সামাজিক মাধ্যমে নিউজ ওয়েবসাইটের আদলে তৈরি কয়েকটি প্রোপাগান্ডা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়। এসব প্ল্যাটফর্মে সংবাদ আঙ্গিক ব্যবহার করে আওয়ামীপন্থি গুজব ও বিভ্রান্তিকর বয়ান ছড়ানো হচ্ছে। এমনই একটি ফেসবুক পেজ হলো ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’। পেজটি রাজনৈতিক ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিয়মিতভাবে অপতথ্য প্রচার করে আসছে।


সম্প্রতি একই নামে একটি ওয়েবসাইটও চালু করা হয়েছে, যার লিংক তারা প্রায়ই পোস্টের কমেন্টে শেয়ার করছে, যেন সেটিকে খবরের ওয়েবসাইট হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। এই পেজ ও ওয়েবসাইটে ধারাবাহিকভাবে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। 


এই পেজে বর্তমানে ১ লাখ ৬ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চালু করা হয় । পেজটি বর্তমানে ৩জন অ্যাডমিন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যাদের সকলের অবস্থান বাংলাদেশে। পেজটিতে উল্লেখিত rukedaraobd ওয়েবসাইটের ডোমেইন তথ্য যাচাই করে জানা যায়, এটি চলতি বছরের ৩ নভেম্বর নিবন্ধিত হয়েছে।





পেজে প্রচারিত কিছু অপতথ্য

চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর ‘স্ক্রিপ্ট দূর্বল! হরিনের এবং নৌকার সোনা এরকম সিলভার ঝালাই ক্যান? পিতলের উপর সোনালী রং হলেই সোনা হয়না রে পাগলা। একটা লকার বানাইতে ১৬ মাস লাগলো’ শিরোনামে নৌকা এবং হরিণের প্রতিকৃতি সংবলিত ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ, দাবি করা হয়, শেখ হাসিনার লকার থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের বিষয়টি বানোয়াট। তবে এই দাবি সঠিক নয়। কেননা শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, লকারের এসব স্বর্ণালঙ্কার তাদের পরিবারের। অনুমতি ছাড়া লকার ভাঙায় তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেন।


একইভাবে ১৪ নভেম্বর ‘ব্যারিষ্টার ফুয়াদ অন্তরঙ্গ মুহুর্তে জনতার হাতে আটক,  বিডিও লিংক…’ শিরোনামে একটি ফটোকার্ড পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। তাদের ওয়েবসাইটেও একই শিরোনামে প্রতিবেদন (আর্কাইভ) প্রকাশ করে। তবে দাবিটি সঠিক ছিল না। আদতে অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইট থেকে ভিন্ন ব্যক্তির ভিডিও সংগ্রহ করে তা ব্যারিস্টার ফুয়াদের বলে ছড়ানো হয়।


১৫ নভেম্বরও আরেকটা অপতথ্য ছড়ানো হয়। ‘মেট্রোরেলে চলছে একচ্ছত্র গ্রামীন ফোনের বিজ্ঞাপন’ শিরোনামে কিছু ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। তবে মেট্রোরেলে গ্রামীন ফোনের একচ্ছত্র বিজ্ঞাপন চলার বিষয়টি সঠিক ছিল না, বরং সেখানে রবি, জয়া, সেনোরা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নিয়মিত প্রচার হয়।


চলতি বছরের ৬ অক্টোবর ‘জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাচ্চা গুলো খেলছিল এতেই অ'*বৈ'ধ   স'*র'কা'রের  কাঁপুনি  ধরে যায়, এখন সুশীল পত্রিকাগুলো কলমের কালি  ফু'*রি'য়ে  গিয়েছে, তাদের গ্রেফতারের তীব্র  নি'*ন্দা  ও প্রতিবাদ জানাই’ শিরোনামে একটি ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ, দাবি করা হয়, জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ার ফলে শিশুদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে দাবিটিও সঠিক ছিল না। এটি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়া সাত শিশুকে উদ্ধারের ঘটনার ছবি।


গত ২২ সেপ্টেম্বর ‘শিবির সেবা দাসী জুমার ভিডিও ভাইরাল, বিস্তারিত কমেন্টে’ শিরোনামে একটি ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ, ছবিটি ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমার বলে দাবি করা হয়। তবে এ দাবিও সঠিক ছিল না। ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন নারীর ছবি সংগ্রহ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সেখান জুমার মুখমণ্ডল বসিয়ে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর ‘২০১৯ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী মাহফুজ আজকের প্রধান উপদেস্টার বিশেষ সহকারী এবং কথিত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নামে সরকার পতনের মাস্টারমাইণ্ড’ শিরোনামে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ, বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে নিয়ে সেসময় দাবিটি ছড়ানো হয়। কিন্তু এই দাবিও সঠিক ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের নেতা অভিযোগে আটক হওয়া মাহফুজ বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নন। সেসময় আটককৃত ব্যক্তির পুরো নাম আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ। তাছাড়া, দুজনের নামে কিছুটা মিল থাকলেও তারা ভিন্ন ব্যক্তি।

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর পেজটি থেকে এক তরুণের ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে দাবি করা হয়, তিনি শহীদ আবু সাঈদ এবং এটি তার মৃত্যুর দিন গুলি লাগার পর হাঁটিয়ে নেওয়ার দৃশ্য। তবে এই দাবি সঠিক ছিল না। ছবির ব্যক্তিও আবু সাঈদ নন। ওই তরুণের নাম মো. নাইমুল ইসলাম। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।


২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হিসেবে ড. ইউনুসের এখন দাড়ি রাখা উচিত- ধর্ম উপদেষ্টা’ শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাকের লোগো সংবলিত একটি ফটোকার্ড পোস্ট (আর্কাইভ) করে। তবে সেসময় ইত্তেফাক এ ধরণের কোন ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং ধর্ম উপদেষ্টাও সেসময় এমন কোনো মন্তব্য করেননি। মূলত, ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড বিকৃত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।


২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ‘১৫০ জন সমন্বয়কের ভিতর ১০৮ জন ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী’ শিরোনামে একটি ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ,  এনসিপির বর্তমান আহ্বায়ক ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ারও শিবিরের কর্মী ছিলেন বলে ছবিটির মধ্যকার দুই যুবককে আসিফ ও নাহিদ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এই দাবিও সঠিক ছিল না। এই ছবিতে নাহিদ ইসলাম কিংবা আসিফ মাহমুদ ছিলেন না। মূলত, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসূচির একটি ছবিকে বিকৃত করে সেখানকার দুই ব্যক্তির মুখমণ্ডলের জায়গায় আসিফ ও নাহিদের মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে।


আলোচিত ফেসবুক পেজটি ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপতথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। তাদের প্রচারণার মূল লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের চরিত্রহনন করা। পেজটি মৃত্যুর গুজব, ব্যক্তিগত জীবনের স্ক্যান্ডাল, গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মিথ্যা দাবি, এবং ভুয়া কোটেশন/সংবাদ ছড়াতে সক্রিয়। তাদের অপপ্রচারের কৌশলগুলির মধ্যে প্রধান হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বা ফটোশপ ব্যবহার করে ছবি বিকৃতি, প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের লোগো ও নামের মিলের অপব্যবহার, এবং আকর্ষণীয় ফটোকার্ড ও ক্লিকবেইট শিরোনাম ব্যবহার করে সংবেদনশীল রাজনৈতিক বিষয়বস্তু ও গুজবের মাধ্যমে দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া।


অর্থাৎ, ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ আসলে নিউজসাইটের ছদ্মবেশে একটি প্রোপাগাণ্ডা মেশিন।



Topics:



আপনার মতামত দিন

এই পোস্টটি কি আপনার জন্য সহায়ক ছিল?

0%

100%

আপনার মতামত শেয়ার করুন:

| মন্তব্য সমূহ:

এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্যটি করুন!



নামে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, কাজে ফ্যাসিস্ট

অনুসন্ধান

নামে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, কাজে ফ্যাসিস্ট

৮ ডিসেম্বর ২০২৫

<p>নামে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, কাজে ফ্যাসিস্ট<br /></p>

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সামাজিক মাধ্যমে নিউজ ওয়েবসাইটের আদলে তৈরি কয়েকটি প্রোপাগান্ডা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়। এসব প্ল্যাটফর্মে সংবাদ আঙ্গিক ব্যবহার করে আওয়ামীপন্থি গুজব ও বিভ্রান্তিকর বয়ান ছড়ানো হচ্ছে। এমনই একটি ফেসবুক পেজ হলো ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’। পেজটি রাজনৈতিক ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিয়মিতভাবে অপতথ্য প্রচার করে আসছে।


সম্প্রতি একই নামে একটি ওয়েবসাইটও চালু করা হয়েছে, যার লিংক তারা প্রায়ই পোস্টের কমেন্টে শেয়ার করছে, যেন সেটিকে খবরের ওয়েবসাইট হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। এই পেজ ও ওয়েবসাইটে ধারাবাহিকভাবে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। 


এই পেজে বর্তমানে ১ লাখ ৬ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চালু করা হয় । পেজটি বর্তমানে ৩জন অ্যাডমিন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যাদের সকলের অবস্থান বাংলাদেশে। পেজটিতে উল্লেখিত rukedaraobd ওয়েবসাইটের ডোমেইন তথ্য যাচাই করে জানা যায়, এটি চলতি বছরের ৩ নভেম্বর নিবন্ধিত হয়েছে।





পেজে প্রচারিত কিছু অপতথ্য

চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর ‘স্ক্রিপ্ট দূর্বল! হরিনের এবং নৌকার সোনা এরকম সিলভার ঝালাই ক্যান? পিতলের উপর সোনালী রং হলেই সোনা হয়না রে পাগলা। একটা লকার বানাইতে ১৬ মাস লাগলো’ শিরোনামে নৌকা এবং হরিণের প্রতিকৃতি সংবলিত ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ, দাবি করা হয়, শেখ হাসিনার লকার থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের বিষয়টি বানোয়াট। তবে এই দাবি সঠিক নয়। কেননা শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, লকারের এসব স্বর্ণালঙ্কার তাদের পরিবারের। অনুমতি ছাড়া লকার ভাঙায় তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেন।


একইভাবে ১৪ নভেম্বর ‘ব্যারিষ্টার ফুয়াদ অন্তরঙ্গ মুহুর্তে জনতার হাতে আটক,  বিডিও লিংক…’ শিরোনামে একটি ফটোকার্ড পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। তাদের ওয়েবসাইটেও একই শিরোনামে প্রতিবেদন (আর্কাইভ) প্রকাশ করে। তবে দাবিটি সঠিক ছিল না। আদতে অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইট থেকে ভিন্ন ব্যক্তির ভিডিও সংগ্রহ করে তা ব্যারিস্টার ফুয়াদের বলে ছড়ানো হয়।


১৫ নভেম্বরও আরেকটা অপতথ্য ছড়ানো হয়। ‘মেট্রোরেলে চলছে একচ্ছত্র গ্রামীন ফোনের বিজ্ঞাপন’ শিরোনামে কিছু ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। তবে মেট্রোরেলে গ্রামীন ফোনের একচ্ছত্র বিজ্ঞাপন চলার বিষয়টি সঠিক ছিল না, বরং সেখানে রবি, জয়া, সেনোরা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নিয়মিত প্রচার হয়।


চলতি বছরের ৬ অক্টোবর ‘জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাচ্চা গুলো খেলছিল এতেই অ'*বৈ'ধ   স'*র'কা'রের  কাঁপুনি  ধরে যায়, এখন সুশীল পত্রিকাগুলো কলমের কালি  ফু'*রি'য়ে  গিয়েছে, তাদের গ্রেফতারের তীব্র  নি'*ন্দা  ও প্রতিবাদ জানাই’ শিরোনামে একটি ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ, দাবি করা হয়, জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ার ফলে শিশুদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে দাবিটিও সঠিক ছিল না। এটি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়া সাত শিশুকে উদ্ধারের ঘটনার ছবি।


গত ২২ সেপ্টেম্বর ‘শিবির সেবা দাসী জুমার ভিডিও ভাইরাল, বিস্তারিত কমেন্টে’ শিরোনামে একটি ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ, ছবিটি ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমার বলে দাবি করা হয়। তবে এ দাবিও সঠিক ছিল না। ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন নারীর ছবি সংগ্রহ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সেখান জুমার মুখমণ্ডল বসিয়ে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর ‘২০১৯ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী মাহফুজ আজকের প্রধান উপদেস্টার বিশেষ সহকারী এবং কথিত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নামে সরকার পতনের মাস্টারমাইণ্ড’ শিরোনামে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ, বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে নিয়ে সেসময় দাবিটি ছড়ানো হয়। কিন্তু এই দাবিও সঠিক ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের নেতা অভিযোগে আটক হওয়া মাহফুজ বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নন। সেসময় আটককৃত ব্যক্তির পুরো নাম আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ। তাছাড়া, দুজনের নামে কিছুটা মিল থাকলেও তারা ভিন্ন ব্যক্তি।

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর পেজটি থেকে এক তরুণের ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে দাবি করা হয়, তিনি শহীদ আবু সাঈদ এবং এটি তার মৃত্যুর দিন গুলি লাগার পর হাঁটিয়ে নেওয়ার দৃশ্য। তবে এই দাবি সঠিক ছিল না। ছবির ব্যক্তিও আবু সাঈদ নন। ওই তরুণের নাম মো. নাইমুল ইসলাম। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।


২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হিসেবে ড. ইউনুসের এখন দাড়ি রাখা উচিত- ধর্ম উপদেষ্টা’ শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাকের লোগো সংবলিত একটি ফটোকার্ড পোস্ট (আর্কাইভ) করে। তবে সেসময় ইত্তেফাক এ ধরণের কোন ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং ধর্ম উপদেষ্টাও সেসময় এমন কোনো মন্তব্য করেননি। মূলত, ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড বিকৃত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।


২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ‘১৫০ জন সমন্বয়কের ভিতর ১০৮ জন ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী’ শিরোনামে একটি ছবি পোস্ট (আর্কাইভ) করে। অর্থাৎ,  এনসিপির বর্তমান আহ্বায়ক ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ারও শিবিরের কর্মী ছিলেন বলে ছবিটির মধ্যকার দুই যুবককে আসিফ ও নাহিদ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এই দাবিও সঠিক ছিল না। এই ছবিতে নাহিদ ইসলাম কিংবা আসিফ মাহমুদ ছিলেন না। মূলত, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসূচির একটি ছবিকে বিকৃত করে সেখানকার দুই ব্যক্তির মুখমণ্ডলের জায়গায় আসিফ ও নাহিদের মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে।


আলোচিত ফেসবুক পেজটি ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপতথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। তাদের প্রচারণার মূল লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের চরিত্রহনন করা। পেজটি মৃত্যুর গুজব, ব্যক্তিগত জীবনের স্ক্যান্ডাল, গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মিথ্যা দাবি, এবং ভুয়া কোটেশন/সংবাদ ছড়াতে সক্রিয়। তাদের অপপ্রচারের কৌশলগুলির মধ্যে প্রধান হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বা ফটোশপ ব্যবহার করে ছবি বিকৃতি, প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের লোগো ও নামের মিলের অপব্যবহার, এবং আকর্ষণীয় ফটোকার্ড ও ক্লিকবেইট শিরোনাম ব্যবহার করে সংবেদনশীল রাজনৈতিক বিষয়বস্তু ও গুজবের মাধ্যমে দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া।


অর্থাৎ, ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ আসলে নিউজসাইটের ছদ্মবেশে একটি প্রোপাগাণ্ডা মেশিন।