| এক্সপ্লেইনার
যা যা জানা গেলো ।। জোর করে চুল দাড়ি কেটে ‘ভিডিও কন্টেন্ট’ বানানোর হোতা কারা?
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্প্রতি এক বৃদ্ধকে জোর করে চুল ও দাড়ি কাটার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বৃদ্ধের নাম মো. হালিম উদ্দিন। ঘটনাটি ঘটেছে, ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজার এলাকায়। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ঘটনা তিন মাস আগের বলে জানা যায়।
বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান করে দেখেছে, “Human Service Bangladesh” নামের পেইজ থেকে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে অন্তত তিনজন জড়িত। তাঁরা নিয়মিত গৃহহীন ও পরিবারহহীন মানুষের চুল-দাড়ি কাটার ভিডিও তৈরি করেন এবং ফেসবুক ও ইউটিউবে আপলোড করেন। “মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও মৌলিক সহায়তা” দেওয়ার নামে প্রচার করা হয়। পূর্বে এই পেইজটি অন্য নামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভিডিও তৈরি করে আয়ের জন্য ব্যবহৃত হতো। প্রতি ভিডিও তৈরিতে নেওয়া হয় ১৪০০ টাকা। তবে তখন এর নাম ছিল ভিন্ন।
এই পেইজের বিভিন্ন ভিডিওতে ঘুরে ফিরে তিন থেকে চারজনকে জোরপূর্বক চুল-দাড়ি কাটতে দেখা গেছে। এসময় তাঁরা প্রায়ই ‘Human Service Bangladesh’ লোগো সম্বলিত ভেস্ট গায়ে জড়ান। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দুইজনের গায়ে ভেস্ট ও লোগো দেখা গেছে, অন্য এক তরুণের পোশাক ছিল সাধারণ। এই তিনজনকে পেইজের অন্যান্য ভিডিওতেও দেখা গেছে। যদিও আলোচিত ভিডিওটি এখন পেইজে নেই। ভেস্ট ও ব্যক্তিদের দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ টিমের কাজ।
বাংলা ফ্যাক্টের অনুসন্ধানে জানাচ্ছে, পেইজটি প্রথম চালু হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। তখন এর নাম ছিল BD TheBest। পরে ২০২৪ সালের মে মাসে নাম বদলে হয় News 64। ওই বছরের আগস্টে নাম হয় Afsar Studio। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পেইজটির নাম আবার বদলে রাখা হয় Human Service Bangladesh। এই নাম বদলের পরেই ভিডিওগুলোতে লোগো সম্বলিত ভেস্ট পরা ব্যক্তিদের দেখা যায়। উল্লেখ্য, বাংলা ফ্যাক্ট ২০২৪ এর আগস্টের পর এরকম অনেক ফেসবুক পেইজের নাম বদল বিষয়ে গবেষণা প্রকাশ করেছে।
আলোচিত টিমটির ইউটিউব চ্যানেল ‘Humanity First BD’-তে তিনজন প্রতিনিধির নাম রয়েছে। তাঁরা হলেন, মোঃ আফসার আহমেদ, মুফতী সোহরাব ও মোঃ বেলাল মিয়া। মুফতী সোহরাব বাংলাফ্যাক্টকে জানিয়েছেন, তিনি এই উদ্যোগের প্রধান। তারা স্বীকার করেছেন যে ভিডিও নির্মাণ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনার ব্যাপারে তাঁদের খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই।
উদ্যোগ নেওয়ার পর তারা বুঝতে পারেন যে এর মাধ্যমে অর্থ আয় করা সম্ভব। এরপর তারা BD TheBest পেইজের মালিক মোঃ আফসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি পরে পেইজের নাম পরিবর্তন করেন। পেইজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের আগে মোঃ আফসার পার্ক, সিনেমা হলসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মানুষকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে ভিডিও কন্টেন্ট বানাতেন। প্রেম, কলহ ইত্যাদি নিয়ে অভিনীত ছোট ছোট ভিডিওগুলো তাঁর পেইজে দেখা যায়। তবে ২০২৪ সালের কোনো কন্টেন্ট আর তাঁর পেইজে খুঁজে পাওয়া যায় না।
চুল কাটা টিমের সোহরাব হোসেন বাংলাফ্যাক্টকে জানিয়েছেন, তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এবং বর্তমানে বেকার। তিনি বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে আরবিতে পড়ান। ফেসবুক ভিডিও থেকে আয় হলেও তা “ভালো কাজে” ব্যবহার করা হয় বলে তিনি দাবি করেছেন। টিমের অন্য সদস্য বেলাল মিয়া সিএনজি চালক। তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে এই ‘কার্যক্রম’ পরিচালনা করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা সেখানে যান। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ঘটনায় নেত্রকোণার এক ব্যক্তি তাঁদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা সেখানে পৌঁছেছেন। চুল কাটায় জড়িতদের অন্তত একজনের বাবড়ি চুল থাকতে দেখা যায়।
সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের যুক্ত নন। পেইজের মূল এডমিন মোঃ আফসারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। মূলত আফসারই ভিডিও তৈরি ও আপলোডের দায়িত্বে থাকেন।
আপনার মতামত দিন
এই পোস্টটি কি আপনার জন্য সহায়ক ছিল?
আপনার মতামত শেয়ার করুন:
| আরও পড়ুন

এক্সপ্লেইনার
যা যা জানা গেলো ।। জোর করে চুল দাড়ি কেটে ‘ভিডিও কন্টেন্ট’ বানানোর হোতা কারা?
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্প্রতি এক বৃদ্ধকে জোর করে চুল ও দাড়ি কাটার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বৃদ্ধের নাম মো. হালিম উদ্দিন। ঘটনাটি ঘটেছে, ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজার এলাকায়। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ঘটনা তিন মাস আগের বলে জানা যায়।
বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান করে দেখেছে, “Human Service Bangladesh” নামের পেইজ থেকে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে অন্তত তিনজন জড়িত। তাঁরা নিয়মিত গৃহহীন ও পরিবারহহীন মানুষের চুল-দাড়ি কাটার ভিডিও তৈরি করেন এবং ফেসবুক ও ইউটিউবে আপলোড করেন। “মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও মৌলিক সহায়তা” দেওয়ার নামে প্রচার করা হয়। পূর্বে এই পেইজটি অন্য নামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভিডিও তৈরি করে আয়ের জন্য ব্যবহৃত হতো। প্রতি ভিডিও তৈরিতে নেওয়া হয় ১৪০০ টাকা। তবে তখন এর নাম ছিল ভিন্ন।
এই পেইজের বিভিন্ন ভিডিওতে ঘুরে ফিরে তিন থেকে চারজনকে জোরপূর্বক চুল-দাড়ি কাটতে দেখা গেছে। এসময় তাঁরা প্রায়ই ‘Human Service Bangladesh’ লোগো সম্বলিত ভেস্ট গায়ে জড়ান। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দুইজনের গায়ে ভেস্ট ও লোগো দেখা গেছে, অন্য এক তরুণের পোশাক ছিল সাধারণ। এই তিনজনকে পেইজের অন্যান্য ভিডিওতেও দেখা গেছে। যদিও আলোচিত ভিডিওটি এখন পেইজে নেই। ভেস্ট ও ব্যক্তিদের দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ টিমের কাজ।
বাংলা ফ্যাক্টের অনুসন্ধানে জানাচ্ছে, পেইজটি প্রথম চালু হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। তখন এর নাম ছিল BD TheBest। পরে ২০২৪ সালের মে মাসে নাম বদলে হয় News 64। ওই বছরের আগস্টে নাম হয় Afsar Studio। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পেইজটির নাম আবার বদলে রাখা হয় Human Service Bangladesh। এই নাম বদলের পরেই ভিডিওগুলোতে লোগো সম্বলিত ভেস্ট পরা ব্যক্তিদের দেখা যায়। উল্লেখ্য, বাংলা ফ্যাক্ট ২০২৪ এর আগস্টের পর এরকম অনেক ফেসবুক পেইজের নাম বদল বিষয়ে গবেষণা প্রকাশ করেছে।
আলোচিত টিমটির ইউটিউব চ্যানেল ‘Humanity First BD’-তে তিনজন প্রতিনিধির নাম রয়েছে। তাঁরা হলেন, মোঃ আফসার আহমেদ, মুফতী সোহরাব ও মোঃ বেলাল মিয়া। মুফতী সোহরাব বাংলাফ্যাক্টকে জানিয়েছেন, তিনি এই উদ্যোগের প্রধান। তারা স্বীকার করেছেন যে ভিডিও নির্মাণ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনার ব্যাপারে তাঁদের খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই।
উদ্যোগ নেওয়ার পর তারা বুঝতে পারেন যে এর মাধ্যমে অর্থ আয় করা সম্ভব। এরপর তারা BD TheBest পেইজের মালিক মোঃ আফসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি পরে পেইজের নাম পরিবর্তন করেন। পেইজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের আগে মোঃ আফসার পার্ক, সিনেমা হলসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মানুষকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে ভিডিও কন্টেন্ট বানাতেন। প্রেম, কলহ ইত্যাদি নিয়ে অভিনীত ছোট ছোট ভিডিওগুলো তাঁর পেইজে দেখা যায়। তবে ২০২৪ সালের কোনো কন্টেন্ট আর তাঁর পেইজে খুঁজে পাওয়া যায় না।
চুল কাটা টিমের সোহরাব হোসেন বাংলাফ্যাক্টকে জানিয়েছেন, তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এবং বর্তমানে বেকার। তিনি বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে আরবিতে পড়ান। ফেসবুক ভিডিও থেকে আয় হলেও তা “ভালো কাজে” ব্যবহার করা হয় বলে তিনি দাবি করেছেন। টিমের অন্য সদস্য বেলাল মিয়া সিএনজি চালক। তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে এই ‘কার্যক্রম’ পরিচালনা করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা সেখানে যান। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ঘটনায় নেত্রকোণার এক ব্যক্তি তাঁদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা সেখানে পৌঁছেছেন। চুল কাটায় জড়িতদের অন্তত একজনের বাবড়ি চুল থাকতে দেখা যায়।
সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের যুক্ত নন। পেইজের মূল এডমিন মোঃ আফসারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। মূলত আফসারই ভিডিও তৈরি ও আপলোডের দায়িত্বে থাকেন।